গণমুখী বাজেট চাই

যুগান্তর মনজু আরা বেগম প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৪, ১২:০৫

আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। এত বিরাট অঙ্কের বাজেট ঘোষণা করা হলেও সংশোধিত বাজেট ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়। রাজস্ব আয় ৫ লাখ কোটি টাকা ধরা হলেও ২২ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়। মোদ্দাকথা, বাজেট যা করা হয়, তা যথাযথ বাস্তবায়ন কখনোই হয় না। কাজেই বড় অঙ্কের বাজেট ঘোষণা না করে প্রয়োজন অনুযায়ী জনগুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো বিবেচনায় নিয়ে সেই লক্ষ্যে বাজেট ঘোষণা করা সমীচীন বলে অর্থনীতিবিদসহ বিজ্ঞজনরা মনে করেন। তাছাড়া এবার আইএমএফ আগামী বাজেট ছোট করার পরামর্শ দিয়েছে। বাজেট বড় করে প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হওয়ায় সরকারকে ঋণ নিয়ে ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। এতে করে ঋণের বোঝা বাড়ে। ফলে জনগণের করের টাকায় এ ঋণ সুদসহ পরিশোধ করতে হয়; যা দেশের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনে না। এবারও অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মধ্যে নতুন সরকারের বাজেট ঘোষণা হতে যাচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে অধিকসংখ্যক মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল; সেজন্য এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে ৬ লাখ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছিল। প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।


প্রতিবছর বাজেট আসে বাজেট যায়, কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্যের খুব একটা পরিবর্তন হয় না। আমাদের সংবিধানে প্রদত্ত জনগণের মৌলিক বিষয়গুলো বরাবরই উপেক্ষিত হয়। বাজেটে বরাদ্দকৃত সুযোগ-সুবিধাগুলো সর্বস্তরের মানুষ সমানভাবে ভোগ করতে পারে না। এসব সুযোগ-সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে সরকারকে কয়েকটি ক্ষেত্রে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বাজার পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি কীভাবে রোধ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে বাজেটে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। মূল্যস্ফীতির কারণে দরিদ্র ও নিুআয়ের মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারত, শ্রীলংকা ও নেপাল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আনলেও বাংলাদেশ কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এর হার বেড়েই চলেছে। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ সর্বক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দেশে প্রধান সমস্যা দুর্নীতি, যার কারণে উন্নয়নমূলক অনেক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। দুর্নীতির কারণে সময়ক্ষেপণ করে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তৃতীয়ত, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত এনে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থ পাচার রোধ করতে হলে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করার পাশাপাশি অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতি রোধ করতে হবে। ব্যাংক/আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চতুর্থত, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে সর্বমহলে কঠোর আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে। কিন্তু এতেও কোনো লাভ হচ্ছে না। সরকার ঋণখেলাপিদের বিষয়ে প্রায় নীরব ভূমিকা পালন করছে। ঋণখেলাপিরা জনগণের টাকা নিয়ে ব্যাংক খালি করে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করবে আর সাধারণ মানুষ দিনের পর দিন এর খেসারত দেবে, এ অবস্থা চলতে পারে না। পঞ্চমত, বাজেটে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার বিষয়টির সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। ২০২২ সালে ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ৫৬ লাখ মানুষকে দক্ষ করে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় কর্মসংস্থান নীতি ২০২২ অনুমোদিত হয়। এ নীতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের বেশি হলেও কাজের সুযোগ সৃষ্টির হার মাত্র ৩.৩২ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে প্রতিবছর দেশে ১৮.৪ লাখ এবং বিদেশে ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করতে হবে। কাজেই এ বিষয়টির দিকে লক্ষ রেখে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য শিল্প খাতে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং এ খাতের উন্নয়নে যথাসম্ভব সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে সুস্থ বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কারণ, এ খাতে স্বল্প পুঁজিতে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব। এ ছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে দক্ষতা-উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও বরাদ্দ বৃদ্ধির ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, যথাযথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে লোপাট না হয় সেদিকে প্রখর দৃষ্টি রাখতে হবে।


দেশে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রবীণরা দেশের সম্পদ। তারা বোঝা নয়। প্রবীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ২০১৩ সালে নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও আজ অবধি তা কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে বহু লেখালেখি করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। তাই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ও অনুমোদিত নীতিমালা বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ এবারের বাজেটে বরাদ্দ রাখার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমাদের সংবিধানে উল্লেখিত গণমানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নে বাজেটে যথাসম্ভব বরাদ্দ বৃদ্ধির দিকে লক্ষ রেখে জনকল্যাণমুখী বাজেট প্রণয়ন করতে হবে, যাতে করে দেশের সর্বস্তরের মানুষ নাগরিক সুবিধাগুলো সমানভাবে ভোগ করতে পারে।


দেশের উন্নয়নে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। ব্যক্তির আয়কর না বাড়িয়ে নতুন করদাতা শনাক্ত করা এবং যারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন, তাদের করজালের আওতায় আনা জরুরি। ২০২০ সালে যেখানে আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ, সেখানে চলতি বছরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭ লাখে। এ বছরের জুন পর্যন্ত ৪০ লাখ হবে বলে ধারণা করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান জানান, ১ কোটি টিআইএন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু সবাই আয়কর দিচ্ছেন না। ১৭-১৮ কোটি মানুষের দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা মাত্র ১ কোটি হলেও তারা সবাই আয়কর দিচ্ছেন না। এ কারণে করজালের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাছাড়া আমাদের দেশে যেসব বিদেশি কোম্পানি রয়েছে এবং যেসব বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন, তারা নিয়মানুযায়ী কর-ভ্যাট দিচ্ছেন কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। অনেকে আয়কর ফাঁকি দেওয়ায় রাজস্ব আয় যথাযথ আদায় হয় না। এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us