এপ্রিলের শেষে ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ আরও কিছু ইসরায়েলি শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। খবরে আরও বলা হয়েছে, হেগের বিশ্ব আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আশঙ্কায় নেতানিয়াহু ‘অস্বাভাবিক চাপে’ রয়েছেন।
নেতানিয়াহুর ধারণা, আইসিসির কৌঁসুলি করিম খান অচিরেই তাঁকেসহ তাঁর সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং আইডিএফপ্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রতিরোধে নেতানিহুয়া ‘সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেছেন।
তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির যেকোনো পদক্ষেপে হস্তক্ষেপ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছেন। নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য ইসরায়েলি নেতার বিরুদ্ধে যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়, তাহলে তা হবে ইসরায়েলের জন্য বড় ধরনের আঘাত। নেতানিয়াহুর অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করে কী করে! তারা ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঠেকানোর জন্য সর্বাত্মক জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
গ্রেপ্তার হতে পারেন—এমন খবর জানার পর গত ৩০ এপ্রিল এক ভিডিও বার্তায় আইসিসির বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন নেতানিয়াহু।আইসিসি যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, তাহলে তা হবে নেতানিয়াহুর ভাষায়, ইসরায়েলের ওপর আইসিসির ‘জঘন্য হামলা’। তিনি ইসরায়েলের মিত্রদেশগুলোর ওপর আস্থা প্রকাশ করে বলেছেন, ইসরায়েল আশা করে, মুক্ত বিশ্বের নেতারা ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের বিরুদ্ধে আইসিসির ‘জঘন্য হামলার’ বিরুদ্ধেও দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়াবেন।
নেতানিয়াহু আইসিসির কৌঁসুলিদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল তার আত্মনিয়ন্ত্রণের সহজাত অধিকার ক্ষুণ্ন করে—আইসিসির এমন কোনো চেষ্টা মেনে নেবে না। তিনি তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে আইসিসির কৌঁসুলিদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করেছেন বলে আইসিসির কৌঁসুলির দপ্তর অভিযোগ করেছে। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে নেতানিয়াহুসহ সে দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে আইসিসিকে সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কিছুসংখ্যক ইহুদিপন্থী আইনপ্রণেতা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির যেকোনো পদক্ষেপে হস্তক্ষেপ করা এবং তা ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি অনুরোধ করেছেন।
অবশ্য আইসিসির কৌঁসুলি এবং কর্মকর্তাদের ধমক দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০২০ সালে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে আইসিসির কর্মকর্তারা যখন তদন্ত করছিলেন, তখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইসিসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। পরে ২০২১ সালে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন সেটি তুলে নেন।
আইসিসি সম্পর্কে নেতানিয়াহুর নেতিবাচক বিভিন্ন বক্তব্য ও বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন আইসিসির কর্মকর্তারা। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, আইসিসির কর্মকর্তাদের কাজে বাধার সৃষ্টি করা, তাঁদের ভয়ভীতি দেখানো অথবা তাঁদের ওপর অবৈধ প্রভাব খাটানোর সব ধরনের চেষ্টা অবশ্যই অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এ ধরনের হুমকি বিশ্বের এই স্থায়ী যুদ্ধাপরাধ আদালতের ‘বিচার প্রশাসন’-এর বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল হতে পারে। এ কথা ঠিক, যখন কোনো পক্ষ থেকে আদালত বা আদালতের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুমকি দেওয়া হয়, তখন আদালতের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়।