রানা প্লাজার ধসের ১১ বছর হলো। ২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিলে আটতলা রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১০০ জন নিহত এবং ২ হাজার ৫০০ জন আহত হন। এই বহুতল ভবনে পাঁচটি গার্মেন্টস কারখানায় পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করতেন।
ভবনটি ধসে পড়ার তিন দিন আগের থেকেই কেঁপে কেঁপে উঠছিল। যখনই বিদ্যুৎ চলে যেত, একসঙ্গে অনেকগুলো জেনারেটর চলতে শুরু করলে তখন কম্পনটা বেশি হতো। ২১ এপ্রিল বড় ধরনের কম্পন হওয়ায় শ্রমিকেরা কাজ থেকে বের হয়ে এসেছিলেন। ২২ এপ্রিল ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরের অফিস থেকে কাজ বন্ধ রাখার মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়।
২৪ এপ্রিল ভবনের নিচতলায় ব্যাংক, দোকান ও অফিস বন্ধ থাকলেও ভবনের মালিক সোহেল রানার উদ্যোগে ফ্যাক্টরিগুলো চালু হয়। সোহেল রানা ছিলেন এলাকার প্রতাপশালী। শ্রমিকেরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাজে যান। কাজে না যাওয়ার ইচ্ছা অনেকের ছিল কিন্তু নিজেদের ইউনিয়ন না থাকায় তাঁরা যে কর্তৃপক্ষকে দাবিটা জানাবেন সেই উপায় ছিল না। সে ক্ষেত্রে রানা প্লাজা ধসকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যায় না।
আগের বছরই ২০১২ আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে শতাধিক শ্রমিক পুড়ে মারা যান। অগ্নিনির্বাপকব্যবস্থা ছিল না। পানির রিজার্ভ ট্যাংকে পানি ছিল না। আগুন থেকে বাঁচার জন্য বের হওয়ার পৃথক পথ ছিল না। করিডরে মালপত্রের স্তূপ ছিল। এই মালামালের স্তূপ আগুনকে বাড়িয়ে দেয়। আগুনে আটকে অসহায়ভাবে মারা যান শতাধিক শ্রমিক।
পোশাকশিল্পে ১৯৯১ সাল থেকে বেশ কটি দুর্ঘটনার কারণে ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশ ছিল বিপজ্জনক। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও খবর হয়েছে এসব দুর্ঘটনা। বিদেশি বায়ার, ব্র্যান্ড বা হোলসেলাররা চাপ দিচ্ছিলেন কাজের নিরাপদ পরিবেশের জন্য, ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়া, শিশুশ্রম বন্ধ ও শ্রম আইনের বাস্তবায়নের জন্য। তারা এ বিষয়ে পোশাকশিল্পের মালিক ও বাংলাদেশ সরকারের কারখানা পরিদর্শনের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়েও সাহায্য করতে রাজি ছিল। এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র ট্রেড ইউনিয়ন বায়ার-ব্র্যান্ডদেরও চাপে রেখেছিল।