আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে এ পর্যন্ত যা কিছু ঘটছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর সহিংস ঘটনা ঘটেছে নাটোরে। নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে অপহরণ করে মারধর করে মৃতপ্রায় করে ফেলা হয়েছে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে। এর সঙ্গে জড়িত অন্তত ১১ জনের পরিচয় জানা গেছে। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে স্থানীয় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা তাঁদের শনাক্ত করেছেন। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মী।
আসলে তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নানা শংকার কথা আলোচনায় আসছিল। তফসিলের পর চেয়ারম্যান পদের পাঁচ সম্ভাব্য প্রার্থী গণসংযোগ শুরু করেন। নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও শুরু হয় আলোচনার ঝড়। কিন্তু কিছুদিন পর হঠাৎ নিরবতা, চুপ হয়ে যান চার সম্ভাব্য প্রার্থী। সেই সঙ্গে কমে যায় নির্বাচন নিয়ে বিশ্লেষণও। মাঠে ঘুরতে থাকেন শুধু এক প্রার্থী– লুৎফুল হাবীব রুবেল। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তাঁর আরেকটি পরিচয়, তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ও নাটোর-৩ আসনের এমপি জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক। আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা শেষ সময়ে এসে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় রুবেলের লোকজন তাঁকে তুলে নিয়ে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে তুলে নেওয়ার ঘটনার ভিডিও ফুটেজেও পলক ও রুবেলের ঘনিষ্ঠজনকে দেখা গেছে। এ ঘটনায় মামলার পর রুবেলের দুই অনুসারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে গত মাসে খোকসায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতার বিরুদ্ধে দলেরই আরেক নেতাকে তুলে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরকম ঘটনা ঘটে চলেছে নানা জায়গায়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলার ভোটেও আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ নেই মাঠে। পাল্টাপাল্টি প্রার্থী হওয়া নিয়ে ক্ষমতাসীনদের ঘরোয়া বিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অনেক স্থানে পরিস্থিতি সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে না এলেও দলটির কিছু নেতা নির্বাচনে অংশ নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। এজন্যই আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক দেয়নি। দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ এবার প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়ায় এক উপজেলায় দলীয় পদধারী একাধিক নেতা প্রার্থী হচ্ছেন। পরিস্থিতি সামাল দেয়া দলের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিকে হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এসব নির্দেশনা কোনো কাজে আসছে না। প্রায় সব জায়গায় মন্ত্রী এমপিদের স্বজন ও আর্শীবাদপুষ্টরা নির্বাচনের মাঠে আছেন এবং তারা প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টায় লিপ্ত। উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়া এবং প্রার্থী মনোনয়নে দলের কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ না রাখার কৌশলে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘাত আরও বাড়তে পারে।