বিশ্বের এক নম্বর ফাস্ট ফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ডসের প্রধান নির্বাহী ক্রিস কেম্পজিনস্কি চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি হঠাৎ প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি দিলেন যে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও তার বাইরেও তাঁর কোম্পানির ব্যবসায় ‘উল্লেখযোগ্য ক্ষতি’ হয়েছে। একই রকম ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কফি চেইন স্টারবাকস।
এ দুই আমেরিকান কোম্পানির ইসরায়েলি শাখা হামাসবিরোধী অভিযানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করার কারণেই তাদের পণ্য বয়কটের ডাক আসে।
আসলে ইসরায়েলের পণ্য ও সেবা বয়কটের একটি বৈশ্বিক আন্দোলন কার্যকর আছে ২০০৫ সাল থেকে। তখনো ইসরায়েলের গাজা অভিযান ও দখলের প্রতিবাদেই এ বয়কট আন্দোলনের সূচনা হয়। বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার (ডাইভেস্ট), নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) আন্দোলনটি বিডিএস নামে পরিচিত। এ আন্দোলন মধ্যপ্রাচ্য ও কিছু মুসলিমপ্রধান দেশের বাইরে ইউরোপ ও আমেরিকাতেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
শুধু ইসরায়েলি পণ্য নয়, ইসরায়েলি কোম্পানি ও ব্যবসা থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারেও ভালো সাড়া মেলে। এমনকি কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানও ইসরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এসব দেশে বিভিন্ন পণ্যের উৎস ঘোষণা–সম্পর্কিত আইনও বিডিএস আন্দোলনের জন্য দারুণভাবে সহায়ক হয়। ইসরায়েলের দখলীকৃত ফিলিস্তিনি জমিতে উৎপাদিত পণ্য, যেমন বিখ্যাত মেদজুল খেজুরের মোড়কে উল্লেখ থাকে, তা কোথায় উৎপাদিত। ফলে সাধারণ ভোক্তারা সহজেই সেগুলো চিনতে পারে এবং তা বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পায়।
আন্তর্জাতিক বয়কটের প্রভাব বর্ণবাদী যুগে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ শাসকেরা যেভাবে উপলব্ধি করেছে, ঠিক সেভাবেই ইসরায়েলও বিডিএস আন্দোলনের ফল টের পেতে শুরু করে। শুরু হয় তাদের লবিং এবং বয়কট আন্দোলন নিষিদ্ধ করে তারা কিছু কিছু জায়গায় আইন করাতে সক্ষম হয়। যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় পর্যায়ে কোনো আইন করাতে সক্ষম না হলেও ৩০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে এ আন্দোলনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বয়কটের রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রভাবের বিষয়টির অবতারণার কারণ হচ্ছে, আমাদের রাজনীতিতে হঠাৎ বয়কটের প্রসঙ্গ নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক।
নির্বাচনের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা প্রভাবশালী (সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার) হিসেবে বেশি পরিচিত, এ রকম অনেকে গত নির্বাচনে আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে ‘ইন্ডিয়া আউট’ নামে একটি প্রচারাভিযান শুরু করে। তারা যে খুব সংগঠিত কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের একনিষ্ঠ সমর্থক, এমন কোনো প্রমাণ নেই। দেশের ভেতরে ও বাইরে ছড়িয়ে থাকা এসব প্রভাবশালীর মধ্যকার অভিন্ন যোগসূত্র হচ্ছে, তারা সরকারবিরোধী।