চার বছর পর পর লিপইয়ার আসে। মানে ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনের বদলে ২৯ দিনে হয়। বাড়তি একটি দিন বিশ্বজুড়েই উল্লাস নিয়ে আসে। ২৯ ফেব্রুয়ারি যাদের জন্ম, তাদের জন্মদিন পালন করার জন্য চার বছর অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে মজা করে ২৯ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন। এবার ২৯ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিনে বছরের বোনাস পাওয়া দিনটিতে অনেকেই সপরিবার, সবান্ধব রাজধানীর বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন। সেই যাওয়া যে অন্তত ৪৬ জনের শেষ যাওয়া হবে, অনেকের জীবনে যে স্থায়ী বিভীষিকা বয়ে আনবে; কেউ নিশ্চয়ই ভাবেননি।
ঢাকার খুব জনপ্রিয় রাস্তার একটি হলো বেইলি রোড। ঢাকার মঞ্চনাটকের প্রাণকেন্দ্র এই বেইলি রোড। মহিলা সমিতি ও গাইড হাউজ মিলনায়তনেই মঞ্চস্থ হয় অধিকাংশ মঞ্চনাটক। ইদানীং বেইলি রোডে খাবার দোকানের আধিক্য হয়েছে। তেমনই একটি রেস্টুরেন্ট বিল্ডিং ‘গ্রিন কোজি কটেজ’। ৭ তলা ভবনটিতে ৮টি রেস্টুরেন্ট। রাত পৌনে ১০টায় যখন আগুন লাগে, তখন পুরো ভবনটি ছিল আলো ঝলমলে ও জমজমাট। হঠাৎ করেই যেন কেয়ামত নেমে এলো সেখানে। প্রথম যখন আগুন লাগার খবর পাই, তখনই বুঝিনি ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে আগুন এমন প্রাণঘাতী হতে পারে। পরে যখন একের পর এক মৃত্যুর খবর এলো, তখন শোকের ছায়া নেমে এলো ঢাকাসহ গোটা বাংলাদেশে।
ঠিক আগের দিন রাতে এটিএন নিউজের নিয়মিত টক শো’তে আমার অতিথি ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুজ্জামান। ফেসবুকে দেখলাম, তিনি সপরিবারে আটকা পড়েছেন সেখানে। অধ্যাপক কামরুজ্জামানের মেয়ের জন্মদিন ছিল ১ মার্চ। তাদের পরিকল্পনা ছিল রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করে রাত ১২টায় জন্মদিনের কেক কেটে বাসায় ফিরবেন। ভাগ্যগুণে তারা বাসায় ফিরতে পেরেছেন, তবে মনে স্থায়ী বিভীষিকা নিয়ে। অধ্যাপক কামরুজ্জামানের মেয়ে তাকে বলছিল, বাবা, জন্মদিনেই কি আমার মৃত্যুদিন হবে। ছাদে চলে যেতে পেরেছিলেন বলে অধ্যাপক কামরুজ্জামানের পরিবার বেচেঁ গেছেন বটে, তার মেয়ের জন্মদিন হয়তো মৃত্যুদিন হয়নি। কিন্তু অন্তত ৪৬ জনের মৃত্যুদিন ২৯ ফেব্রুয়ারি।
একটা দুর্ঘটনায় কত বেদনার ইতিহাস বলে শেষ করা যাবে না। পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি নাসিরুল ইসলামের স্ত্রী মারা গেছেন ২০১৮ সালে। তারপর থেকে দুই মেয়েকে নিয়েই তার সংসার, তার স্বপ্ন। মেয়ে লামিসা ইসলাম বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন। স্বপ্ন যখন হাতের মুঠোয়, তখনই তা বদলে গেলো ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নে। লামিসা বাঁচার আকুতি জানিয়ে বাবাকে ফোন করেছিলেন। শত মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানো নাসিরুল ইসলাম তার মেয়েকে বাঁচাতে পারেননি।