প্রীতি উরাং। চা শ্রমিকের সন্তান। চা শ্রমিকের কিশোরী কন্যাটি ঢাকায় এসেছিল গৃহকর্মীর কাজ করতে, দেশের শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায়।
গৃহকর্মী শব্দটা শুনতে বেশ ভালোই শোনায়। আসল পরিচিতি হবে বাসাবাড়ির চাকর। ভদ্রলোকেরা হালনাগাদ গৃহপরিচারিকা, গৃহকর্মী, হেল্পিং হ্যান্ড ইত্যাদি পরিচিতি ব্যবহার করছেন তাদের ক্ষেত্রে। কিন্তু কর্মটা এবং সম্মানটা ওই আগের মতোই, ঘরের চাকর-বাকর কিংবা গৃহভৃত্য থেকে আলাদা কিছুতে উন্নীত হয়নি অধিকাংশ ক্ষেত্রে।
প্রীতি উরাং ঢাকায় আসবে, কার বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করবে, এইসব বিষয় পরিবারের লোকের বাইরে অন্যদের জানার কথা নয়। অবশ্য প্রীতির ক্ষেত্রে পরিবারও কতটা জানত এই নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই অপরিচয়ে বাঁধ সাধল প্রীতির মৃত্যু। ঢাকার মোহাম্মদপুরের যে বাসায় প্রীতি উরাং কাজ করত, সেটির অবস্থান একটি বহুতল ভবনের নয় তলায়। সেই নয় তলা থেকে প্রীতি পড়ে গিয়ে মরে যায়।
৬ ফেব্রুয়ারি এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। প্রীতি উরাংয়ের নিথর দেহ নিচে পড়ে থাকতে দেখে মোহাম্মদপুরের জেনিভা ক্যাম্প-সংলগ্ন এলাকাবাসী হত্যার অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করতে থাকেন। মূলত এলাকাবাসীর বিক্ষোভের কারণেই পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। সৈয়দ অশফাক ও তানিয়া খন্দকার দম্পতিকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হয়, যতদূর জানি মামলাটি হয়েছে অবহেলাজনিত মৃত্যুর। আমি আইনজ্ঞ নই, তবু মনে হয়েছে, মামলার এজাহারেই একটি শুভঙ্করের ফাঁকি তৈরি করে রাখা হয়েছে। কে তৈরি করেছে ফাঁকিটা? পুলিশ নাকি সৈয়দ আশফাকের ক্ষমতা?
সেই মামলাতেই আশফাকুল ও তানিয়া কারাগারে আটক আছেন। মামলাটি হতে পারত হত্যা মামলা। নিদেনপক্ষে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা। হত্যা না আত্মহত্যা সেটা অবশ্য তদন্তসাপেক্ষ। মামলার এজাহারে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা যেত। শিশু শ্রম বিষয়েও আরেকটি মামলা করা যেত, না হয় শিশু শ্রমিক নিয়োগ করে যে অপরাধ করেছেন সৈয়দ আশফাক ও তানিয়া খন্দকার, সেগুলোর উল্লেখ থাকতে পারত। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ধারাগুলোও প্রয়োগ করা উচিত ছিল এই মামলায়। কিন্তু মোহাম্মদপুর থানা সেই বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছে।
প্রীতি উরাং মারা যাওয়ার পর অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে চলে আসতে শুরু করে। মামলার এজাহার বেশ দুর্বল। এলাকাবাসী বলছেন প্রীতির দেহ উলঙ্গ ছিল। কিন্তু সেই বিষয়ে মামলার এজাহারে আদৌ কিছু লেখা হয়েছে কি? সংবাদমাধ্যম অবশ্য প্রীতির উলঙ্গ থাকার বিষয়টি ঠিক নয় বলে জানিয়েছে। ময়নাতদন্ত, সুরতাহাল রিপোর্ট— এই ধরনের অনেক প্রক্রিয়া আছে। সেই ধাপগুলো কীভাবে নিষ্পন্ন হয়েছে। আর সবচেয়ে বড়সড় প্রশ্ন হচ্ছে বিচারটা আদৌ ঠিকঠাক হবে তো? এইরকম অনেক ভাবনা আমাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।