কিছুদিন আগে আমি লিখেছিলাম, তবে কি বাংলাদেশের মানুষ এখন খতনার জন্যও বিদেশ যাবে? তখন অনেকে বলেছিলেন একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে এত বড় মন্তব্য করা যাবে না। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে একই ঘটনার জন্ম দেন মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারের চিকিৎসকরা। খতনা করাতে গিয়ে অ্যানেসথেশিয়ার বাড়তি মাত্রায় মারা যায় নামে আহনাফ তাহমিদ আয়হাম নামের এক শিশু।
আয়ান আহমেদ থেকে আয়হাম- এ দুই শিশুর মৃত্যুর দূরত্ব মাত্র ৪৪ দিন। মৃত্যুর কারণও অভিন্ন। খতনা করাতে গিয়ে অতিরিক্ত অ্যানেসথেশিয়া। রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের অবহেলা ও গাফিলতিতে গত ৭ জানুয়ারি যখন শিশু আয়ানের জীবন আলো নিভে যায়, তখন প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছিল অনেকেই। এখন আবার একই রকম ঘটনা ঘটলো।
মিল আরও আছে। জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে খতনা কিংবা অ্যানেসথেশিয়া প্রয়োগেরই অনুমোদন ছিল না। অভিযুক্ত দুই চিকিৎসকের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধনও নেই। ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিরও নিবন্ধন ছিল না।
একটা দুইটা ভুল চিকিৎসার খবর এলেই এসব খবরে পত্রিকার পাতা ভরে যায় কারণ তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নড়ে চড়ে বসে। অধিদপ্তর এই অনুমোদনহীন ক্লিনিক, সেন্টার বা হাসপাতালের পরিসংখ্যান দেয়, আমরাও লেখালেখি ও বলাবলি করি। এরপর সবাই আরেকটি ঘটনা ঘটা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকে বলে আসছেন যে, অনুনোমোদিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করতে হবে। আমরা দেখি সেটা হয় কিনা।
সারাদেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দেখভালের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিলে চিকিৎসাকেন্দ্র পরিচালনার সুযোগ মেলে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বড় দায়িত্ব নজরদারি করা। এবং সেটা করছে না বলেই অবৈধ চিকিৎসাকেন্দ্র, হাসপাতালে দেশ ছেয়ে গেছে।