দেশে অতিধনী ও অতিদরিদ্রের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে

বণিক বার্তা আবু তাহের খান প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:২২

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বসাম্প্রতিক প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’-এর তথ্য জানাচ্ছে যে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দেশে অতিধনী ও অতিদরিদ্র উভয় শ্রেণীর মানুষের সংখ্যাই উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে (সমকাল, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)। তাছাড়া এ সময়ে গ্রাম ও শহরের মধ্যেও আয়বৈষম্য বেড়েছে, যেখানে ব্যাপক হারে কমেছে গ্রামীণ মানুষের আয়। অবশ্য ধনী ও দরিদ্র এবং গ্রাম ও শহরের মধ্যকার আয়বৈষম্য বৃদ্ধির এ ধারা গত দেড় দশকের এ-সংক্রান্ত ধারা ও প্রবণতা থেকে ভিন্ন কিছু নয়। আর রাষ্ট্রের যেসব নীতি ও সিদ্ধান্তের কারণে এসব ঘটছে, সেসব নীতি ও সিদ্ধান্ত যেহেতু একই কাঠামো ও আঙ্গিকে অপরিবর্তনীয় ধারায় অব্যাহত আছে, সেহেতু ধারণা করা যায় যে নিকট ভবিষ্যতেও বৈষম্যের এ ক্রমবর্ধমানতা একই বা তার চেয়েও অধিক গতিতে চলতে থাকবে। আর কবে নাগাদ তা থামবে, সেটি বস্তুত নির্ভর করছে বিদ্যমান নীতিকাঠামোয় রাষ্ট্র কবে নাগাদ নিম্নবিত্ত-সাধারণ মানুষের পক্ষে তার সিদ্ধান্তগুলো পুনর্বিন্যাস করতে উদ্যোগী হবে, তার ওপর।


এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কী সেসব নীতি ও সিদ্ধান্ত এবং কী সেসব রাষ্ট্রীয় চর্চা ও রাষ্ট্র সমর্থিত কর্মকাণ্ড, যেগুলোর কারণে দেশে পাল্লা দিয়ে অতিধনী ও অতিদরিদ্র উভয়ের সংখ্যাই ক্রমাগত হারে ও দ্রুতলয়ে বাড়ছে? এ তালিকায় একেবারে প্রথমেই রয়েছে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক সহযোগিতা, সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের অভ্যন্তরীণ বস্তুগত সম্পদ, যথা খাসজমি, নদীনালা, খাল-বিল, পাহাড়, বনভূমি, চর, সাগর-মোহনা, পুকুর-ডোবা, পরিত্যক্ত শিল্প-কারখানা, বাড়িঘর ও স্থাপনা, ‘শত্রুসম্পত্তি’, বিরাষ্ট্রীয়করণকৃত শিল্প ইত্যাদি অবাধে দখল করে নেয়া। হিসাব করলে দেখা যাবে, এ জাতীয় দখলদারত্বের আওতায় গত ৫২ বছরে যে পরিমাণ ভূসম্পত্তি বিভিন্ন পর্যায়ের অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে গেছে, তার পরিমাণ বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মোট আয়তনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে। আর এসব ভূসম্পত্তির অবৈধ দখলদাররাই বস্তুত এখন দেশের শীর্ষ বিত্তবানদের তালিকার একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছে। এদের মধ্যে বিশাল বিশাল আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার সুবাদে সাধারণ মানুষ যাদের ভূমিদস্যু হিসেবে চেনে, এ দেশে প্রকৃত ভূমিদস্যুদের তালিকা তার চেয়েও অনেক বড়, যার কিছুটা ওপরে উল্লেখ করা হলো। আর দস্যুতার এ প্রক্রিয়ায় সাধারণ বিত্তের মানুষও যে ক্রমান্বয়ে বিত্তহীন হয়ে পড়ছে, সেটিই বস্তুত দেশে অতিদরিদ্রের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার একটি বড় কারণ।


সম্পদের মালিকানা ও দখলদারত্বের মেরুকরণের ধারায় এর পরই রয়েছে শ্রম শোষণ। এ দেশের বিত্তবানদের একটি বড় অংশ বস্তুত এ শ্রম শোষণের মাধ্যমেই নিজেদের বিত্তবৈভবের জায়গাটিকে এতটা স্ফীত ও একচেটিয়া করে তুলতে সক্ষম হয়েছে। চা বাগান, তৈরি পোশাক শিল্প, নির্মাণ শিল্প, পরিবহন, জাহাজ ভাঙা শিল্প, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ, তথ্যপ্রযুক্তি, জনশক্তি রফতানি ইত্যাদি হেন কোনো খাত নেই যেখানে শ্রম শোষণের এ থাবা প্রকট থেকে অমানবিক হয়ে ওঠেনি (এমনকি আদিবাসী অধ্যুষিত কৃষিপ্রধান এলাকায় কৃষি খাতেও এ শোষণের বিস্তার প্রায় সমভাবে ক্রিয়াশীল)। আর এ শ্রম শোষণ প্রক্রিয়ায় অর্জিত একচেটিয়া মুনাফার ওপর ভিতি করে এ দেশে একটি নতুন বিত্তবান শ্রেণীই শুধু গড়ে ওঠেনি, সে বিত্ত এ দেশে একটি অমানবিক নিষ্ঠুর সমাজও তৈরি করেছে, যা পশ্চিমের পুঁজিবাদী সমাজ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। মুনাফার দাপট ও বিস্তার পশ্চিমের পুঁজিবাদী সমাজেও কমবেশি রয়েছে এবং বৈষম্য সেখানেও অনুপস্থিত নয়। কিন্তু পুঁজি ও মুনাফার এরূপ নিষ্ঠুর ও অমানবিক চেহারা পশ্চিমের দেশে একেবারেই অকল্পনীয়। এর একটি বড় কারণ এই যে রাষ্ট্র সেখানে পুঁজিমালিকদের মাধ্যমে জনগণের মানসম্মত জীবনযাপনের ন্যূনতম প্রয়োজন ও চাহিদাটুকু পরিপূরণের পরই কেবল পুঁজির অবশিষ্ট বিকাশকে উৎসাহিত করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্র সম্পূর্ণ একচোখা, যে চোখে সে শুধু বিত্তবান পুঁজিপতির স্বার্থই দেখতে পায়। তার দৃষ্টিহীন অন্য চোখ সাধারণ জনগণের কষ্টকে উপলব্ধি করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা তো দূরের কথা, দেখতেও পায় না।


বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের আওতায় সম্পদ আহরণ এবং আহরিত সম্পদের বিতরণ ও বণ্টনের ক্ষেত্রে বিরাজমান অন্যায়, অদক্ষ ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবস্থার কারণেও সমাজে অতিধনী ও অতিদরিদ্রের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সেক্ষেত্রে কর, শুল্ক, খাজনা, ইজারা, স্ট্যাম্প, বন্ড, লিজ, শেয়ার বিক্রি ইত্যাদির ন্যায় সম্পদ সংগ্রহ পদ্ধতির আওতায় ন্যায্যতা অনুযায়ী তার তত বেশি অবদান রাখার কথা, যার যত বেশি সম্পদ। কিন্তু বাংলাদেশের চরম দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার আওতায় ঘটছে তার উল্টোটি। এখানে বিত্তবানরা সরকারকে কম রাজস্ব দেয়, অর্থাৎ রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে তারা সরকারকে ফাঁকি দেয়; এবং যে পরিমাণে তারা ফাঁকি দেয়, সরকারও সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সে পরিমাণ অর্থ নিম্নবিত্ত মানুষের কাছ থেকে আদায় করে নেয়। কারণ বাজেটের আওতাধীন পরিচালন ব্যয়গুলো নির্বাহের প্রয়োজনে রাজস্ব আহরণের ব্যাপারে নির্ধারিত বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা তাকে (সরকারকে) করতেই হয়। অথচ বিত্তবানরা যদি তা ফাঁকি না দিয়ে নিয়ম ও ন্যায্যতা অনুযায়ী পরিশোধ করত, তাহলে ওই পরিমাণ রাজস্ব পরিশোধ থেকে নিম্নবিত্ত মানুষ অব্যাহতি পেতে পারতেন। কিন্তু সেটি না হওয়ার কারণে তারই অনিবার্য ফল হিসেবে সমাজে অতিধনী ও অতিদরিদ্রের সংখ্যা ক্রমাগত হারে বাড়ছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

দেশে বিবাহবিচ্ছেদ বেড়েছে, বড় কারণ পরকীয়া: বিবিএসের জরিপ

আজকের পত্রিকা | বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)
২ মাস, ২ সপ্তাহ আগে

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us