সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মঙ্গলবার রাত থেকেই খবরটি ছড়াতে থাকে। মো. জিয়াউল হক একুশে পদকের জন্য মনোনীত হওয়ায় গ্রামের মানুষ, আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁর বাড়িতে ভিড় জমান, অভিনন্দন জানাতে সঙ্গে নিয়ে আসেন ফুলের তোড়া। কিন্তু জীবিকার তাগিদে তখন দই বিক্রি করতে বেরিয়েছেন ৯০ বছর বয়সী জিয়াউল হক।
সমাজসেবায় এবারের একুশে পদকের জন্য মনোনীত জিয়াউল হক চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার মুসরিভূজা বটতলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ফেরি করে দই বিক্রি করেন। সেই আয়ে সংসার চালানোর পর উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে বই কিনে তিনি গরিব ছাত্রদের মধ্যে বিলি করেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সম্মতিপত্রে জিয়াউল হকের মনোনয়নের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল সকালে মুসরিভূজা বটতলা গ্রামে গিয়ে জানা যায়, জিয়াউল হক পাশের গোমস্তাপুর উপজেলা সদর রহনপুর স্টেশন বাজারে দই বিক্রি করতে গেছেন। বাড়িতে তখন শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রহনপুর স্টেশন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, একটি ওষুধের দোকানের সামনে বসে দই বিক্রিতে ব্যস্ত জিয়াউল হক।
এ সময় জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দই ও ক্ষীর নিয়ে আমি সকাল সাতটায় বের হয়েছি। কেননা চাল কেনা ও বাজার করার টাকা ছিল না। আমি কল্পনা করতে পারিনি, যে আমি এত বড় একটা পদক পাওয়ার জন্য মনোনীত হব। জীবনের শেষ দিকে এসে কাজের স্বীকৃতি পেলাম। এখন মরেও শান্তি পাব। কী যে আনন্দ পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’
পথের পাশে দই কিনতে এসে ক্রেতারাও জিয়াউল হককে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন, তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলছিলেন। প্রসাদপুর মাদ্রাসাপাড়ার নাসির উদ্দীন (৪৭) শৈশবকাল থেকে দেখে আসছেন জিয়াউল হক মাথায় দইয়ের ডালি নিয়ে, সাইকেল চালিয়ে দই বিক্রি করে আসছেন। তাঁর দইয়ের সুনাম আছে উল্লেখ করে নাসির উদ্দীন বলেন, ‘তিনি দই বিক্রি করে সংসার চালানোর পর উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে বই কিনে গরিব ছাত্রদের মধ্যে বিলি করেন। বাড়িতে তাঁর নামে একটি সাধারণ পাঠাগার গড়েছেন। শুধু তা–ই নয়, গরিব–অসহায় নারীদের অনেককে বাড়ি করে দিয়েছেন। গ্রামে গ্রামে নলকূপ বসিয়ে দিয়েছেন। অসহায় মানুষদের খাদ্য ও বস্ত্র দিয়েও সহায়তা করে আসছেন অনেক বছর থেকে। গোটা জেলাতেই সাদা মনের শিক্ষানুরাগী মানুষ হিসেবে তাঁর ব্যাপক সুখ্যাতি রয়েছে।’