এক বছর ১০ মাস আগে ইমরান খানকে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। সেই ক্ষমতাচ্যুতির নেপথ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ইন্ধন। ইমরান খানও তার একাধিক বক্তব্যে ওই কথা ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন। আর এর মূল কারিগর ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি ডনাল্ড লু— এমনটি দাবি করেছিলেন ইমরান খান নিজেও। তার সেই বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায় মার্কিন সংবাদ মাধ্যম দ্য ইন্টারসেক্টে। গণমাধ্যমটি ডনাল্ড লু এবং ওই সময়ের পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ খানের কথোপকথনের গোপন তারবার্তাটি প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন।
কেন ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইন্ধন দিয়েছিল? এর পেছনে প্রধানত দুটি বিষয় কাজ করেছে। এক, ইমরান খানের কিছু কর্মকাণ্ড মার্কিন নীতি বিরোধী হওয়ায় তারা এমন সিদ্ধান্ত নেয়। যেমন, রাশিয়া যখন ইউক্রেইন অভিযান শুরু করে ওই সময় ইমরান খান রাশিয়া সফরে যান ও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই সময় তিনি ইউক্রেইন প্রশ্নে পাকিস্তানের নিরপেক্ষতার কথা বলেন। দুই, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গেও ইমরানের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। ওই দ্বন্দ্বের একটি বড় কারণ ছিল, ইমরান পাকিস্তানের রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থাকে অধিক জনকেন্দ্রিক করতে চেয়েছিলেন, যা সেনা কর্মকর্তাদের পছন্দ ছিল না।
সুতরাং প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়। ইমরান এতে দমে না গিয়ে মানুষের ওপর আস্থা না হারিয়ে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়েন। ওই সময় এতটাই তীব্র প্রতিবাদ হয়েছিল যে, তার সমর্থকরা পাকিস্তানের সেনা চৌকিতে পর্যন্ত হামলা করেছিল। সে সময় তাকে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে। তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বেঁচে যান, কিন্তু তার একজন কর্মী নিহত হন। এর আগেও তার ওপর আত্মঘাতী হামলা হয়েছিল। তিনি ও তার দল রাজপথে সব ধরনের বিপদ মোকাবেলা করেন। সরকারের অন্যায়-জুলুমের প্রতিবাদ ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি তোলেন। ওই আন্দোলনের পক্ষে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠে।
পাকিস্তানের শাসক দল নির্বাচনের আয়োজন করে ঠিকই, কিন্তু ইমরান খানকে নির্বাচনের বাইরে রাখার পাকা বন্দোবস্ত করে। কেননা, ইমরানের দল নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের হিসেব মিলবে না। তাদের ভয় ইমরানের জনপ্রিয়তা। ইমরানকে ঠেকাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাদের হাতে থাকা সব অস্ত্রই ব্যবহার করে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খান, তার দল ও মার্কাকে নিষিদ্ধ করা হয়। মামলা দিয়ে তাকে ২৪ বছরের জেল দেওয়া হয়। চেষ্টা করা হয় তার দল ভাঙ্গার। নেতা-কর্মীদের ওপর সীমাহীন দমন-পীড়ন চলে। জেলে পোরা হয়। কিন্তু তাদের মনোবল টলানো যায়নি।
ইমরান খানের বয়স ৭২। দুটি মামলায় তাকে ২৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে ২৪ বছর পর যখন তিনি জেল থেকে ছাড়া পাবেন তখন তার বয়স হবে ৯৬ বছর। তিনি কি ততদিন বেঁচে থাকবেন? বেঁচে থাকলেও কি কর্মক্ষম থাকবেন? এ তো গেল দুই মামলার রায়! তার বিরুদ্ধে আরও ১০টি মামলা বিচারাধীন! তার মানে পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে তার বিদায়ের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইমরানকে নির্বাচনে হারাতে-ঠেকাতে ব্রিটেনে নির্বাসনে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে গোপন সমঝোতা করা হয়েছে।