বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদ সবে শুরু করেছে; গুরুতর কোনো নাটক না ঘটলে ভারতেও বিজেপি সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদ শুরু করতে যাচ্ছে। দুই দেশের সম্পর্কে পুরোনো ও অনিষ্পন্ন অনেক ইস্যুই নতুন মেয়াদেও দুই সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এর মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টনের ইস্যুটি স্বাভাবিকভাবেই সামনের সারিতে থাকবে। কিন্তু আমার মতে, আসন্ন মেয়াদে নদী বিষয়ে বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে যাচ্ছে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির নবায়ন। দেখছি, ভারতের চিন্তক মহলেও একই ভাবনা দানা বেঁধেছে।
ভারতের বর্তমান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল প্রতিষ্ঠিত ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ তথা চিন্তন-সরোবর ‘বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন’ এ বিষয়ে আলোকপাত করেছে। এর ওয়েবসাইটে একটি নিবন্ধ লিখেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার ও সাবেক ডেপুটি নিরাপত্তা উপদেষ্টা পঙ্কজ শরণ। তিনি বলছেন, ‘পানি বণ্টনের ইস্যুতে ২০২৬ সালে গঙ্গার পানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি নতুন করে মনোযোগ টেনে নেবে। কেবল অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহ নয়, বরং সেগুলোর পানি ঘাটতি বণ্টনের মধ্যেও সমাধান খুঁজে পেতে হবে’ (ভিআইএফইন্ডিয়া ডট ওআরজি, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪)।
‘নতুন মেয়াদের বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকেও সক্রিয়তা লক্ষণীয়। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর ১১ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণের পর দেখা যায়, গত মেয়াদের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে প্রথম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই সাক্ষাৎ শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে, বৈঠকে সে বিষয়েও কাজ শুরু করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)।
হাছান মাহমুদ ৬ ফেব্রুয়ারি ভারত সফরে যান এবং ৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের পানি সহযোগিতা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করায় জোর দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া ২০২৬ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাওয়া গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির নবায়নেও জোর দিয়েছেন (বার্তা সংস্থা ইউএনবি, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)।
এটি ঠিক, দুই দেশের নদী সম্পর্কের ক্ষেত্রে গঙ্গা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিস্তা নিয়ে যদিও আলোচনা সবচেয়ে প্রাচীন ও পরম্পরাবহুল, পানি, প্রবাহ ও অববাহিকা বিবেচনায় গঙ্গার সঙ্গে তুল্য নয়। এমনকি ২০১৯ সালে ফেনী নদী এবং ২০২২ সালে কুশিয়ারা নদী নিয়ে যে দুটি চুক্তি হয়েছে, সেগুলোও গঙ্গার তুলনায় নস্যি মাত্র। তুলনা করলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে; ফেনী চুক্তিতে পানির পরিমাণ ১ দশমিক ৮২ কিউসেক, কুশিয়ারায় ১৫৩ কিউসেক, আর গঙ্গায় অন্তত ৩৫ হাজার কিউসেক পানি ভাগাভাগির প্রশ্ন।