কিছু মানুষ আছে, যারা সারাক্ষণ কেবল হা-হুতাশ করে। তাদের কাছে দুনিয়ায় সমস্যা ছাড়া কিছু নেই। গণতন্ত্র, সুশাসন, মূল্যবোধের অবক্ষয়, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, বিশ্বপরিস্থিতি, বেকার সমস্যা, মূল্যস্ফীতি, ডলারের সংকট, রিজার্ভের সংকট, লুটপাট, অর্থ পাচার ইত্যাদি নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। আবার কিছু মানুষ আছে, যারা এসব সমস্যাকে খুব একটা গায়ে মাখে না। তারা নিজেদের মতো করে পথ চলে। দিন-দুনিয়া নিয়ে তাদের তেমন কোনো ভাবনা নেই। তারা বাঁচার আনন্দেই বেঁচে থাকে। আধুনিক হওয়ার চেষ্টা করে। তারা প্রয়োজনে মুখোশ খুলছে, আবার দরকার হলে পরছেও। তাদের দিন কাটে টাকা কামানোর ধান্দা অনুসন্ধান করে। আসলে আধুনিক মানুষ এখন টাকাপয়সা, সম্পত্তি ছাড়া অন্য কোনো ভাবনায় নিজেকে ভাসাতে তেমন আনন্দ বোধ করে না।
এই মানুষগুলোর কারণেই বাংলাদেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এখন পরিণত হয়েছে টাকা বানানোর সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ ভূখণ্ডে। মানুষ দেদার টাকা বানাচ্ছে। টাকা ওড়াচ্ছে। এ দেশের যে পরিমাণ মানুষ প্রতিদিন চিকিত্সা, ভ্রমণ, বিনোদন, কেনাকাটার জন্য বিদেশ যায়, সেটা কেবল উন্নত কোনো দেশের সঙ্গেই তুলনীয়।
বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশেই কিন্তু কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার মালিক হওয়া সহজ কাজ নয়। অন্য সব দেশে এর জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। একটু একটু করে, অনেক সাধ্য-সাধনার পর টাকার মালিক হওয়া যায়। ধনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়। পুঁজিবাদী দেশগুলোতেও পুঁজি গড়ে ওঠে ধীরে এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। আমেরিকার বিল গেটস, ফোর্ড, কার্নেগি, রকফেলার; জার্মানির ক্রুপস, জাপানের মিত্সুবিশি, মিত্সুই থেকে শুরু করে ভারতের টাটা-বিড়লা পর্যন্ত কেউই পারমিটবাজি বা নিছক সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দুই-দশ বছরের মধ্যে নিঃসম্বল অবস্থা থেকে কোটিপতিতে পরিণত হননি।
কিন্তু বাংলাদেশে কোটিপতি হওয়ার জন্য তেমন কোনো সাধনা বা পরিশ্রম করতে হয় না; এখানে ‘অলৌকিক’ উপায়ে রাতারাতি কোটিপতি হওয়া যায়। পাকিস্তান আমলে মাত্র ২২টি পরিবারের কোটিপতি হিসেবে খ্যাতি ছিল। ঐ ২২ পরিবারের কোটিপতি হওয়ার পেছনেও অবশ্য রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য ও ভোজবাজি কাজ করেছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোটিপতি হওয়ার এই ধারা আরো অনেক বেশি বিকশিত হয়েছে। এখন আমাদের দেশে কোটিপতির মোট সংখ্যা কেউ জানে না। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বাংলাদেশে এখন কোটিপতির সংখ্যা অন্তত ৫ লাখে পরিণত হয়েছে।