১৯ জানুয়ারি ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তিতুল্য অভিনয়শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। মঞ্চ, যাত্রা, অল ইন্ডিয়া রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রসহ শিল্পের সব মাধ্যমে ছিল তার সরব পদচারণা। প্রত্যেক মাধ্যমে তিনি রেখে গেছেন তার ‘সিগনেচার’ বা ‘ছাপ’। প্রতিভাবানকে ছাপিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা বরং শ্রদ্ধার সাথে এই কীর্তিমান ব্যক্তিত্বের নাম উচ্চারিত হয় শুধু এপার-ওপার বাংলায় নয়, বিশ্বব্যাপী।
আটপৌরে চেহারার ঠোঁটের কোণায় মিষ্টি হাসির পাশের বাড়ির অতি সাধারণ ছেলেটি বোধ হওয়া সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের না ছিল নায়কসুলভ চেহারা, শারীরিক গঠন, স্টাইলিশ চুল, আকর্ষণীয় চোখ। অথচ তিনিই প্রিয় বুদ্ধিদীপ্ত ‘ফেলুদা’। কাদা-মাটির মোলায়েম আবেগী প্রেমিক ও মানুষ ‘অপু’।
প্রেমিকার বিরহে জীবনের মোহ ত্যাগী ‘দেবদাস’। তথাকথিত ভিলেন নয় তথাপি খলনায়ক ‘সন্দীপ’। তিনি ছিলেন জলের মতো সহজ, সরল, স্বাভাবিক, সাধারণ অথচ প্রয়োজনীয় একজন অভিনয়শিল্পী। রচয়িতার রচিত বা সৃষ্ট যেকোনো চরিত্রে তাকে নির্বাচনের অর্থ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ছাপিয়ে পাণ্ডুলিপির ঐ মানুষটি বা উক্ত চরিত্রটি হয়ে ওঠার পারদর্শিতা।
তার মাথা থেকে পা, বাচনভঙ্গি থেকে ম্যানারিজম সবকিছুতে যে সাবলীলতা লক্ষ্য করা যায় তা সহজাত বোধ হলেও মূলত চর্চা এবং অভিজ্ঞতা। তার অভিনয় প্রতিভার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলো, আমাদের জন্য শিক্ষণীয়।
তার সব সময়ের বিচরণই ছিল শিল্প। হয় তিনি বাচিকশিল্পী নয় তিনি লেখক। কখনো তিনি চিত্রকর কখনো মঞ্চ ও যাত্রার সংলাপ আওড়ে মন্ত্র মুগ্ধকারী জাদুকর। তাকে জানার আগ্রহ যেকোনো অভিনয় সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের ন্যায় আমারও ছিল। তাই অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে আদর্শিক মানুষটাকে অল্পবিস্তর জানার চেষ্টা করেছি।