ছুটির দিনেও কোচিং কেন

আজকের পত্রিকা তাপস মজুমদার প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:২৬

স্কুলের সাপ্তাহিক ছুটি তো মূলত অবসর যাপনের জন্য। চাপমুক্ত একটি সময় অতিবাহিত করার জন্য। একাডেমিক শিক্ষার বাইরে শারীরিক-মানসিক গঠনে শিশুদের আনন্দপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হওয়ার জন্য। ছুটি মানে একটু আরাম। তা সত্ত্বেও যাঁরা ছুটির দিন কোচিং সেন্টার চালাচ্ছেন অথবা যেসব অভিভাবক তাঁদের সন্তানকে এই অবসরটুকু দিচ্ছেন না, তাঁরা কি শুধু ওই বালক বা বালিকার ক্ষতি করছেন? না, মোটেও না। তাঁরা এই জাতির পায়ে কুঠার মারছেন। সম্মিলিতভাবে।


আমাদের তো জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। একটি শিশু যেন শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ-সবল-সুন্দর ও সম্পূর্ণ হয়ে বেড়ে ওঠে, সেটাই তো আমাদের ভাবা ও করা দরকার। এমনিতে এখন যে শিক্ষাদানের পদ্ধতি চালু হয়েছে, সেটাতে হয়তো স্কুলে শিশু-কিশোরেরা অনেকটাই চাপমুক্ত থেকে আনন্দময় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে। যদিও সেখানে স্কুলের সময়সূচি নিয়ে কেউ কেউ অসন্তুষ্ট রয়েছেন। স্কুলের সময়সূচি দীর্ঘ হয়ে যাওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা কষ্টসাধ্য। তাঁরা চান শিশুবান্ধব সময়সূচি। সেটা নিয়ে কর্তৃপক্ষ ভাববে নিশ্চয়। কিন্তু সেটা তো গেল স্কুলের দিনগুলোয়। স্কুলের ছুটির দিন কোনো রকম চাপের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের না রেখে তাদের পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশের জন্য মুক্তভাবে কিছু কাজ করার সুযোগ রাখা উচিত। এর মধ্যে হতে পারে এলাকার পাঠাগারে বন্ধুবান্ধবসহ ভিন্নধর্মী বই পড়া, পুকুরে সাঁতার শেখা, ক্লাবে খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক চর্চায় মনোনিবেশ করা, এলাকার সাংস্কৃতিক সংগঠনে গান-নাচ-আবৃত্তি-নাটক-ছবি আঁকা—এসবের চর্চা করা, ভালো কোনো মুভি উপভোগ করা ইত্যাদি। আমাদের তো কর্মঠ ও দায়িত্বশীল নাগরিক দরকার। তাই ওই সব কাজের জন্য অবশ্যই ছুটির দিন তাদের স্কুল-সম্পর্কিত কোনো পড়াশোনা থাকা সমীচীন নয়। সে জন্য ছুটির দিনগুলোতে কোচিং সেন্টার একান্তই বন্ধ রাখা উচিত। এটা জাতির মঙ্গলের জন্যই প্রয়োজন। পাড়ায়-মহল্লায় সোৎসাহে এ কাজগুলো যথাযথভাবে করতে পারলে নিশ্চয় নাগরিকদের মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন আসবে। সামাজিক ভারসাম্যহীনতার কারণে আমাদের ছেলেমেয়েদের একটি বড় অংশ যেভাবে দিশাহীনতা ও আদর্শহীনতার দিকে ছুটে চলেছে, তা রোধ করতে জরুরি ও সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত আবশ্যক। একজন ছাত্র একদিকে যেমন ছাত্র, তেমনি সে দেশের নাগরিক, একই সঙ্গে সে একজন মানুষ। অতএব পড়াশোনার পাশাপাশি নাগরিক ও মানবিক দায়িত্ব যে তার রয়েছে, সেটা তাকে অনুধাবন করানোর প্রয়োজন রয়েছে। ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাকে সীমিত রেখে একজন বৈষম্যহীন, সৎ ও দক্ষ পেশাজীবী হওয়া যে দেশপ্রেমিক নাগরিকের দায়িত্ব, সেই শিক্ষাও তাকে নিতে হবে। যে শিক্ষা মানুষকে ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ বানানো ঠেকাতে পারে না, সেই শিক্ষা অবশ্য অবশ্যই ছুড়ে ফেলতে হবে এবং যত শিগগির সম্ভব সেই কাজে প্রচণ্ডভাবে মনোনিবেশ করা দরকার। 


এ লেখাটি যখন লিখছি, তখন খবরের কাগজে একটি খবর দেখতে পেলাম—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির প্রতিবাদে আইনজীবী মো. নুরুল হুদা প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। নুরুল হুদা জানাচ্ছেন—বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক এবং প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পেয়েও তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের আবেদন করার পর থেকে বিভিন্ন অনিয়মের শিকার হন। অনিয়ম-দুর্নীতির ফলে তাঁর চাকরি হয়নি। শুধু মুখস্থবিদ্যাকে বিদ্যাজ্ঞান করে এবং দুর্নীতি-অনিয়ম করে চাকরি দিয়ে বা নিয়ে যে শিক্ষা তথা জাতির কিছুমাত্র মঙ্গল সম্ভব নয়, সেটা কি ওই সব তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত ও ক্ষমতাধর মানুষ জানেন না! জানেন; কিন্তু তাঁরা শুধু টাকার কাছে নতি স্বীকার করেন। কেননা তাঁদের আদর্শের কোনো শিক্ষা নেই। কোচিং সংস্কৃতি তো আদর্শ শেখায় না; অন্তরের শক্তিকেও চিনতে সাহায্য করে না। বড়জোর গোল্ডেন এ প্লাসের সন্ধান দিতে পারে। 


পরিশেষে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করি—মূলত যে কারণে এই লেখার কথা মাথায় এল। আমি ২০২২ সালে চাকরি থেকে অবসরের পর এলাকায় স্বউদ্যোগে একটি পাঠাগার গড়ে তুলেছি। সেখানে বই পড়া, গল্প শোনানো, আবৃত্তি শেখা এবং শিশু-কিশোরদের জন্য উপযুক্ত মুভি দেখানোর পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশপাশের এলাকায় অভিভাবকদের এবং ছেলেমেয়েদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে, দোকানে গিয়ে, স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আসতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু এযাবৎ তিন-চারজনের বেশি পাইনি। এর মধ্যেও যারা এক সপ্তাহ আসে পরের সপ্তাহে কোচিংয়ের অজুহাতে আসা বন্ধ করে দেয়। এ জন্যই ছুটির দিন কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার আহ্বান। শুধু ছুটির দিনের কথা বললাম বটে, কিন্তু কোচিং যদি একেবারে বন্ধ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার সব আয়োজন শেষ করা যায়, তাহলে সেটাই মঙ্গলজনক হতো এবং সেটাই কাম্য। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us