ঋণফাঁদ ও গণতন্ত্রের মূল্য

www.samakal.com মাহবুব আজীজ প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১১

ব্যক্তিজীবনে বা সামাজিক-পারিপার্শ্বিক পরিসরে প্রায়ই এখানে সেখানে সামান্য পরিমাণে টাকা লুট/আত্মসাতের ঘটনায় বিরাট বিপত্তির কথা আমাদের গোচরে আসে। গ্রামগঞ্জে কি শহরে একখানা এক হাজার টাকার মোবাইল ফোন ছিনতাই করে ধরা পড়েও গণপিটুনির শিকার হয়ে নির্মম পরিণতির শিকার হয়েছেন– এমন সংবাদও আমাদের অতি পরিচিত। সামাজিক, পারিবারিক পরিসরে লুটপাটের ঘটনার সাংঘাতিক প্রতিক্রিয়ার কথা আমরা জানতে পারলেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে লুটপাট নিয়ে প্রবল প্রতিক্রিয়া বা প্রতিরোধের ঘটনা আমরা জানতে পারি না। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, ব্যাংকিং খাত দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। এ খাত ব্যবহার হচ্ছে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থে। ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৪টি ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত থেকে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে (সমকাল, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩)। গণমাধ্যমে যেসব তথ্য এসেছে, তা থেকেই এই লুটপাটের হিসাব করেছে সিপিডি; আর যেসব তথ্য আসেনি, সেগুলো বাদ রাখলেও আতঙ্ক গ্রাস করে: এই বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট কী করে সম্ভব? যদি না রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যেই লুটপাটের পৃষ্ঠপোষকতা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে! কত টাকায় ১ হাজার কোটি টাকা হয়, এটা সাধারণ মধ্যবিত্তের কল্পনারও বাইরে, তবে রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলায় লুটপাট বন্ধ করার পদ্ধতি কল্পনাতীত নয়। যদিও দশক থেকে দশকে এ দেশে ব্যাংক লুটের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে, বিগত দেড় দশকে তা বেড়ে ৯২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে! এই বিপুল পরিমাণ অর্থে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে যে কাজ করা সম্ভব, তার তালিকা তৈরি করে হতাশা না বাড়িয়ে বরং সিপিডির সংবাদ সম্মেলনে আরও যা বলা হয়েছে সেদিকে দৃষ্টি দিই– ‘সরকারের মোট রাজস্ব আয়ের পুরোটাই চলে যায় রাজস্ব ব্যয়ে। বার্ষিক উন্নয়নের পুরোটাই হয় ঋণনির্ভর। এমন পরিস্থিতিতে ঋণ দায় পরিশোধে আবার বিদেশি ঋণ গ্রহণ করতে হয়। এটাকে বলা হয় ঋণফাঁদ।’ ঋণের সুদহার, শর্ত, পরিশোধের প্রস্তুতি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সিপিডি বলেছে, খুবই সতর্ক থাকতে হবে, যাতে দেশ ঋণফাঁদে না পড়ে। 


কাঠামোগত জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করে কোনোভাবেই সতর্ক হওয়া সম্ভব নয়। ব্যাংকে টাকা রাখে সাধারণ মানুষ, তাদের সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্তিশালী করতে দ্রুত পদপেক্ষ গ্রহণ তাই জরুরি। 


২.
দেশের অর্থনৈতিক সংস্কৃতিতে লুটপাট ও ঋণফাঁদ যেভাবে গেড়ে বসেছে, একইভাবে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতাও ক্রমে ভারি হচ্ছে। চীন ও কম্বোডিয়ায় যেরকম অনুগত বিরোধী দল আমরা দেখি, বাংলাদেশের রাজনীতিতেও বিরোধী দলের কাছ থেকে একই রকম আনুগত্য প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বিগত দুই সংসদে বিরোধী দলের অভিজ্ঞতা ও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের অবস্থা দেখে তা-ই মনে হচ্ছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তপশিল ঘোষণার পর আমরা দেখি প্রকাশ্যে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী তথাকথিত ‘বিরোধী’ দলের মধ্যে সমঝোতা। গত দুটো সংসদ নির্বাচনেও বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এভাবে ‘নিজেরা নিজেরা’ নির্বাচন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিকে নষ্টই শুধু করছে না; ভবিষ্যতের কিছু আশঙ্কাও ডেকে নিয়ে আসছে। এভাবে অনুগত বিরোধী দলের সমাহারে পরপর নির্বাচিত হয়ে যেতে থাকলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কেন বিএনপিসহ প্রকৃত বিরোধীদের মুখোমুখি হতে চাইবে? বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার যে কৌশল ক্ষমতাসীনরা নিয়েছে, তারই বিস্তৃতি আগামী দিনে দেখা যাবার আশঙ্কা কেউ করলে, তাকে দোষ দেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে দেশের মানুষের সামনে দাগি আসামি হিসেবে চিহ্নিত করতে পারলে প্রতিপক্ষের সুবিধা হয়। তার নানা নমুনা আমরা দেখতে পাই। সেই ২০১৩-১৪ সালের আগুন সন্ত্রাস থেকে শুরু করে অতি সম্প্রতি তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুনে পুড়ে মা-শিশুসহ চারজনের নির্মম হত্যাকাণ্ড দেশের মানুষকে বিমূঢ় করেছে। আরও হতবিহ্বল করেছে আগুনের পরপরই এগুলো বিএনপির সন্ত্রাস বলে সরকারি প্রচারণা শুরু হওয়ায়। আগুন লাগবার পরেই কেবল সরকারের তৎপর গোয়েন্দারা বুঝে যায়, এরা সকলে বিএনপির আগুন সন্ত্রাসী! এত হাজার হাজার গোয়েন্দাজাল– কোথাও জানা যায় না আগে থেকে নাশকতার তৎপরতার কথা। আড়ি পেতে এত কিছু ফাঁস করা গেল, কোথাও ফাঁস হয় না মানুষ হত্যার নীলনকশা!


বিরোধী দল আন্দোলন করবে, নাশকতাকারীরা নাশকতা করবে– নাশকতার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে ‘ওরা আগুন সন্ত্রাসী’ বলে দায় এড়ানো সত্য প্রতিষ্ঠার বদলে আরও প্রশ্নের জন্ম দিতে থাকে। বিরোধী দলের চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে, হাজার হাজার কর্মীকে জেলে ভরেও সরকার সুস্পষ্টভাবে রেলে আগুন দিয়ে মা-শিশু হত্যাকারীরা কারা, তা বের করতে পারে না। মুহুর্মুহু বাসে আগুন দেবার ঘটনাও যেন ঐন্দ্রজালিক স্পর্শে হতে থাকে। কারা তারা? কোন আদিম গুহা থেকে আততায়ী নামীয় প্রাণী এসে বাসে আগুন লাগায়? সরকারের গোয়েন্দজাল তখন শীতনিদ্রায় থাকে? তাদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ আমরা দেখতে পারি না। হায়!  

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us