‘তোমাদের যা বলার ছিল
বলছে কি তা বাংলাদেশ?’
লিখেছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। শেষ চরণগুলো এই রকম—
বারুদেরই গন্ধস্মৃতি
ভুবন ফেলে ছেয়ে
ফুলের গন্ধ পরাজিত
স্লোগান আসে ধেয়ে।
তোমার যা বলার ছিল
বলছে কি তা বাংলাদেশ?
এ লেখা লিখছি ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে। ১৯৭১ সালে তালিকা করে, নিশানা বা টার্গেট করে বাংলার শ্রেষ্ঠ লেখক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও আলবদর চক্র। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-আবাসে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিয়ে বাছাই করা শিক্ষকদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে কাদালেপা মাইক্রোবাস নিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে ডেকে চোখ বেঁধে, হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বুদ্ধিজীবীদের। তাঁরা মীরপুর-রায়ের বাজার জলা–জংলায় পড়ে থাকেন হাত–চোখ বাঁধা লাশ হয়ে। হত্যার আগে তাঁদের নৃশংস নির্যাতন করা হয়।
যতবার আমরা ব্যাপারটা নিয়ে ভাবি, বোঝার চেষ্টা করি, কল্পনা করি, ততবার আমাদের বিবেক যন্ত্রণাদগ্ধ হতে থাকে, এটা কী করে সম্ভব? কেন তালিকা করে পাকিস্তানি সৈন্য ও আলবদর চক্র এই রকম একটা নৃশংস হত্যাকাণ্ড করল?
কেন বুদ্ধিজীবীরাই বিশেষভাবে টার্গেটে পরিণত হলেন? বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করা? প্রতিবাদ, ভিন্নমতের স্পর্ধা চিরকালের জন্য স্তব্ধ করে দেওয়া? জাতির বিবেককে স্তব্ধ করে দেওয়া? এই বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটিকে ভাঙতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন, অসাম্প্রদায়িক ছিলেন, ভিন্নমতাবলম্বী ছিলেন, সাম্যসুন্দর পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখতেন।
বুদ্ধিজীবীর কাজ বিদ্রোহ করা—চিন্তার বিদ্রোহ, বিবেকের বিদ্রোহ। সমাজে যা প্রচলিত, তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন বলেই তাঁরা বুদ্ধিজীবী। সক্রেটিস থেকে শুরু করে গ্যালিলিও—তাঁরা তো নতুন কথাই বলতেন, সেই সত্য যা সমাজ, ক্ষমতা, রাষ্ট্র, প্রচল মানতে পারে না।
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় পড়তে হলো এক খবর, যার শিরোনাম—‘নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষকদের আলোচনা সভা করতে দিল না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’।
১৩ ডিসেম্বর প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ‘নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে এক উন্মুক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার ভবনের আর সি মজুমদার মিলনায়তন ব্যবহারের অনুমতি (বরাদ্দ) নিয়েছিলেন আয়োজকেরা। বেলা আড়াইটায় এ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য ওই মিলনায়তনের কাছেও যান আয়োজকেরা। কিন্তু বেলা দুইটার আগমুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন আয়োজকদের মুঠোফোনে জানান, ওই মিলনায়তন ব্যবহারের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
আর সি মজুমদার মিলনায়তন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে বাতিলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন আবদুল বাছির প্রথম আলোকে বলেন, মিলনায়তন ব্যবহারের নীতিমালা আছে। শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেওয়া হলেও তাঁরা (ডিন) অবহিত হন, এখানে সরকার ও রাষ্ট্রকে হেয় করা হতে পারে। সে জন্য আয়োজকদের বিনয়ের সঙ্গে না করা হয়েছে।