মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর থেকেই ১৪ ডিসেম্বরকে আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করি। রাষ্ট্রীয়ভাবে ছুটির দিন না হলেও জাতীয়ভাবেই দিনটি পালিত হয়। শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, এ দেশের মানুষ হৃদয়ের উষ্ণতা দিয়েই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে।
১৯৭১ সালের এই দিনে বা দিবসের প্রাক্কালে যেসব শিক্ষক, সাংবাদিক ও অন্য পেশাজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা এবং ততোধিক নিষ্ঠুরতায় বধ্যভূমিতে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তা বিশ শতকের সভ্য পৃথিবীর জন্য ছিল ভয়ংকরভাবে লজ্জার।
পশ্চিমা দুনিয়ার বা মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশ সে সময় পাকিস্তানকে সমর্থন করছিল, বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ এই গণহত্যার তারা নিন্দা করেনি; ভূরাজনৈতিক স্বার্থের দাপটের কাছে পাশ্চাত্যের মানবতাবাদ আত্মসমর্পণ করেছিল।
বাংলাদেশের মানুষ স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামে প্রথম রক্ত দিয়েছিল সেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে। ছেষট্টির ছয় দফা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান আর একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন—এই ধারাবাহিকতা শহীদদের রক্তের ধারাবাহিকতা।
১৯৭১-এর ২৫ মার্চের কালরাত থেকে ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় অর্জন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাস যেমন মুক্তিযোদ্ধার গৌরবগাথায় উজ্জ্বল, তেমনি শহীদদের রক্তে রক্তিম।
এই রক্তধারায় মিশে আছে কৃষকের সঙ্গে শিল্পীর রক্ত, শ্রমিকের সঙ্গে শিক্ষকের রক্ত, শিক্ষার্থীর সঙ্গে সাংবাদিকের শোণিত ধারা। তাই বুদ্ধিজীবীদের হত্যার এবং প্রতিবছর এই দিবস পালনের বৈশ্বিক ও জাতীয় পটভূমির দিকে ফিরে তাকানো এ ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ।