রেজাউল করিম বাবলু ছিলেন বগুড়ার স্থানীয় এক পত্রিকার সাংবাদিক। নির্বাচন করারও রোগ ছিল তার। একবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১৭ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ১৭ ভোট পাওয়া সেই বাবলুই এখন জাতীয় সংসদ সদস্য।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বগুড়া-৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন তিনি। গাবতলী-শাহজাহানপুর নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে শেষ মুহূর্তে সেই আসনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেলে বিপাকে পড়ে যায় বিএনপি। আর কোনো উপায় না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলুকে সমর্থন দেয় বিএনপি।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ১৭ ভোট পাওয়া বাবলু ১ লাখ ৯০ হাজার ২৯৯ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। লটারি জিতে না হয় এমপি হয়ে গেলেন। কিন্তু এরপর কোন আলাদিনে চেরাগ পেয়ে গেলেন তিনি, তা বিস্ময়কর।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তার মাসিক আয় ছিল ৪১৭ টাকা। আর পাঁচ বছরে তিনি নিজে কোটিপতি হয়েছেন, স্ত্রীকে কোটিপতি বানিয়েছেন। ৪১৭ টাকার মাসিক আয় বেড়ে এখন হয়েছে ৩ লাখ ২২৮ টাকা। কোটি টাকা দামের গাড়ি, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। আঙুল ফুলে বটগাছ বনে যাওয়ার উদাহরণ হতে পারেন এই রেজাউল করিম বাবলু।
শুধু বাবলু একা নন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে হলফনামা জমা দিয়েছেন। সব এমপি আঙুল ফুলে বটগাছ না হলেও কলাগাছ হয়েছেন প্রায়। আমি বুঝি না, জাতীয় সংসদ সদস্যরা তো জনগণের প্রতিনিধি। তাদের মূল কাজ হলো জনগণের জন্য আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু তারা কীভাবে মাত্র পাঁচ বছরে একেকজন কোটি কোটি টাকা আয় করেন? তাও প্রদর্শিত অর্থ যাদের এত, না জানি তাদের অপ্রদর্শিত অর্থ কত।
প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দিতে গেলে ভয়ে ভয়ে থাকি। পাই পাই হিসাব দিতে হয়। আয়কর কর্মকর্তার নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। আগের বছরের সম্পদের সাথে পরের বছরের সম্পদের ধারাবাহিকতা থাকতে হয়। কিন্তু ৪১৭ টাকা মাসিক আয়ের একজন ব্যক্তি মাত্র পাঁচ বছরে কীভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান? আয়কর কর্মকর্তারা কি সংসদ সদস্যদের সম্পদের অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেন না?