দেশ রূপান্তর : সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির শ্রম অধিকার নীতি ঘোষণা করেছেন। ঘোষণাকালে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। পোশাক কারখানা মালিকদের একজন নেতা হিসেবে বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
সিদ্দিকুর রহমান : এই মার্কিন শ্রমনীতি তো কেবল বাংলাদেশের জন্য না। সারা বিশ্বের জন্যই তারা এই মেমোরেন্ডামটা করেছে। আমি যতটা জানি, সেখানে বাংলাদেশের কথা আলাদা করে কিছু বলেনি।
দেশ রূপান্তর : না, ব্লিঙ্কেন তো বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের নেতা কল্পনা আক্তারের কথা তুলেছেন।
সিদ্দিকুর রহমান : আমেরিকার একটা শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে তারা কাজ করেন। সে জন্য হয়তো তার নামটা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জানা বা তার নাম মনে এসেছে। আর আপনি যার কথা বলছেন সে নির্যাতিত হয়েছে বা এমন কিছু ঘটেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য নেই। সে এখানে কোনো রকমের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এমন কথাও আমাদের জানা নেই। বোধ হয় ২০০৬ সালের দিকে সে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। এছাড়া সে দেশে নিরাপত্তাহীনতায় আছে জানিয়ে বাংলাদেশের কোথাও সে কোনো জিডিও করেনি। ফলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার নামটি কথার কথা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
দেশ রূপান্তর : আমরা যেমন শুনছি যে, মার্কিন শ্রমনীতি নিয়ে রপ্তানিকারকদের মধ্যে তো একটা দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সিদ্দিকুর রহমান : আমি এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু দেখি না। কারণ দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু আইএলও কনভেনশনসহ আরও যেসব সনদে স্বাক্ষর করেছেন, সেগুলো আমরা টাইম টু টাইম মেনে চলছি। টাইম টু টাইম আমরা সংশোধনও করছি। রানা প্লাজার ঘটনার পরে আমরা লেবার ল’, লেবার রুলস সবকিছুর সংশোধন করেছি। এখনো আমরা আইএলও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এবং আমেরিকার কাউন্টার পার্টের সঙ্গে আমরা কিন্তু এসব নিয়ে একত্রেই কাজ করি। যখনই যেটা তারা আমাদের সাজেশন দেয়, সেটা আমরা শ্রমিকদের ও মালিকদের স্বার্থ মিলিয়ে যেটা করা লাগে আমরা তা করি। রানা প্লাজা ধসের পরে এখানে যখন বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছিল, তখন আমরা ভেবেছিলাম যে আমাদের গার্মেন্টস খাত আর ঘুরে দাঁড়াবে না। সেখানেও কিন্তু আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ‘অ্যাকর্ড’ গঠন করি। পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কর্মরত ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট ‘অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ এবং আমেরিকান কাউন্টার পার্টের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ‘অ্যালায়েন্স’ করা হয়।
এখানে আমাদের যারা বায়ার বা যেসব ব্র্যান্ড আমাদের সঙ্গে কাজ করে তারা কিন্তু সবসময় ইনভলব থাকে, কারণ এখানে মূল হচ্ছে ব্যবসা। আর ব্যবসাটা উভয়ের স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে হয়। এটা কখনো এক পক্ষের স্বার্থে হয় না, আলোচনাও একপক্ষীয় হয় না। দুপক্ষেরই স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এবং দেশের স্বার্থ সবার আগে দেখার পরেই কিন্তু জিনিসগুলো করা হয়। আমরা কখনই তাদের সঙ্গে তেমন দ্বিমত পোষণ করিনি। ‘অ্যাকর্ড’ চলে যাওয়ার পর আমরা বিজিএমইএ থেকে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে ওই আদলে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফর হেলথ অ্যান্ড সেইফটি ইন দ্য টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি’ নামে নতুন একটি জোট করি। এখন আমরা সেটির মাধ্যমে মনিটর করি। আমাদের ফ্যাক্টরিগুলো নিয়মিত মনিটর করা হয়। তাছাড়া বায়াররা আমাদের ফ্যাক্টরিগুলো টাইম টু টাইম মনিটর করে। অতএব, শ্রমনীতি মেনেই, দেশের যে শ্রম আইন ও বিধি আছে সে অনুযায়ীই আমরা চলি। এখন নতুন করে যদি আরও কিছু করতে হয় তাহলে সেটাও সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে করব। এখানে ভয় বা দুশ্চিন্তার কিছু আমি দেখছি না।