কোনো কিছুর সংস্কার করা সহজ কোনো কাজ নয়। সংস্কার করতে হলে মেধা ও প্রজ্ঞার দরকার। আরও দরকার হয় দূরদৃষ্টির। সংস্কার যে কোনো ক্ষেত্রে এবং যে কোনো সময়ই হতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে তা জনকল্যাণকর কিনা। আর এর ভবিষ্যৎই বা কী।
এ উপমহাদেশে আধুনিক শিক্ষার গোড়াপত্তন হয় ইংরেজদের হাত ধরে। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে শুরু হলেও ইংরেজি শিক্ষা কাঠামোগত রূপ লাভ করে একই শতকের দ্বিতীয়ার্ধে। ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। মাধ্যমিক স্তরে এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয় প্রথম এন্ট্রান্স পরীক্ষা। এন্ট্রান্স কিংবা মেট্রিকুলেশন নাম যাই হোক, ব্রিটিশ শাসন, এমনকি পাকিস্তান আমলেও এখানে মাধ্যমিক স্তরে কোনো বিভাগ-বিভাজন ছিল না। ১৯৬২ সালে মেট্রিক-এর স্থলে এসএসসি এবং নবম শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য এমনসব বিভাগ-বিভাজন চালু করা হয়।
প্রথমে এন্ট্রান্স, পরে মেট্রিকুলেশন। এ উপমহাদেশে মাধ্যমিক স্তরে মেট্রিক পরীক্ষা বলবৎ থাকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত। পরে একে এসএসসি বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট-এ রূপ দিয়ে তা ১৯৬৩ সাল থেকেই কার্যকর করা হয়। প্রায় একই সময় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের মতোই কুমিল্লা, রাজশাহী ও যশোরে পৃথক শিক্ষা বোর্ড স্থাপন করা হয়।
এ সময় শিক্ষাব্যবস্থায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়। আকস্মিক এ পরিবর্তনের ফলে ছাত্র ও গণঅসন্তোষ প্রকট আকার ধারণ করে। দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা ও বিপত্তি-বিড়ম্বনা। এমন পরিস্থিতিতে বছর না যেতেই ব্যাপক আন্দোলনের মুখে সরকার পরিবর্তনগুলোর বেশ কিছু বাতিল করতে বাধ্য হয়।
পাকিস্তানের স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট ও সামরিক শাসক হিসাবে আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল, তড়িঘড়ি করে শিক্ষা কমিশন (শরীফ কমিশন) গঠন, কমিশনের রিপোর্টে উল্লিখিত গণবিরোধী সব সুপারিশমালা বাতিলের দাবিতে দেশব্যাপী গড়ে ওঠা দুর্বার সব আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার-এসবই আজ ইতিহাসের অংশ। কিন্তু সেই গৌরবদীপ্ত সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অনেকটা আজও অনালোচিতই রয়ে গেছে।
কী কী পরিবর্তন আনা হয়েছিল শিক্ষাব্যবস্থায় সে সময়? পাকিস্তান আমলে শুরু থেকেই দশম শ্রেণির পাঠ বা বছর শেষে এক হাজার নম্বরের মেট্রিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ১৯৬২ সালে নবম শ্রেণিতে ৪০০ (এসএসসি প্রথম পর্ব) আর ১৯৬৩ সালে দশম শ্রেণিতে ৬০০ (এসএসসি দ্বিতীয় পর্ব) দুই বছরে মোট ১০০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া ‘সমাজবিদ্যা’ (Social Studies) নামে ১০০ নম্বরের নতুন একটি বিষয় (আবশ্যিক) চালু করা হয়। নতুন ব্যবস্থায় নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা ১. বাংলা প্রথমপত্র ২. ইংরেজি প্রথমপত্র ৩. সাধারণ গণিত ও ৪. সমাজবিদ্যা এ চারটি বিষয় বা পত্রে মোট ৪০০ নম্বরের পরীক্ষা দেয়। পরের বছর (১৯৬৩) দশম শ্রেণিতে তারা ১. বাংলা দ্বিতীয়পত্র ২. ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র এবং বিভাগওয়ারি (বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য প্রভৃতি) চারটি ঐচ্ছিক বিষয়ে মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষা দেয়।