নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় বাদ পড়েছে অনেক নদীর নাম

বণিক বার্তা মাহবুব সিদ্দিকী প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২১

মাহবুব সিদ্দিকী নদী ও প্রকৃতি গবেষক। তিন দশকের বেশি সময় ধরে নদ-নদী ও জলাশয় নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার। রাজশাহীর ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘‌হেরিটেজ রাজশাহী’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের নদ-নদী ও নগরায়ণের গোড়াপত্তন নিয়ে লিখেছেন ২০টিরও বেশি গ্রন্থ। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের (এনআরসিসি) নদ-নদীর তালিকা, সীমান্তবর্তী নদী ও অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেছেন।


সম্প্রতি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ১ হাজার ৮টি নদীর তালিকা প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে নদী গবেষক-পরিবেশকর্মীরা বিভিন্ন আপত্তি তুলছেন। একজন নদী গবেষক হিসেবে আপনার মূল্যায়ন কী?


মাহবুব সিদ্দিকী: নদী কমিশনের নিজস্ব যে জনবল আছে, তার ওপর ভিত্তি করেই তারা কাজ করে। সব সংস্থাও এভাবেই কাজ করে থাকে। কিন্তু নদীর তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে তা করা যথেষ্ট বলে মনে করি না। শুধু নদী কেন যেকোনো তথ্য, যেকোনো পরিসংখ্যান দাঁড় করাতে গেলে সে বিষয়ে এক্সপার্ট লোকজনদের সম্পৃক্ত করতেই হবে। এর ব্যতিক্রম হলে কখনই ওই পরিসংখ্যান বা তথ্য মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। গত অক্টোবরে নদী রক্ষা কমিশন যে তালিকা প্রণয়ন করেছে, সে বইটা আমি আদ্যোপান্ত পড়েছি। আমার মূল্যায়ন হলো এনআরসিসি খুব তড়িঘড়ি করে বইটা প্রকাশ করেছে। যে কারণে অনেক ভুল-ভ্রান্তি ও অসংগতি রয়ে গেছে। এটি কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। নদী রক্ষা কমিশন হলো হাইকোর্ট ঘোষিত দেশের নদ-নদীর অভিভাবক। সংস্থাটিকে তাই অভিভাবকসুলভ কাজই করতে হবে। তড়িঘড়ি করে যদি একটা তালিকা হয়, আর সেটা যদি মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি আরো বাড়িয়ে দেয় তাহলে সেটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী, দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী, তৃতীয় দীর্ঘতম নদী ইত্যাদি অনেক তথ্য সেখানে দেয়া হয়েছে। কোন বিভাগে সবচেয়ে বেশি নদী প্রবাহিত এসব তথ্যও দেয়া হয়েছে। এর সবই ভুল।


তালিকাটির ব্যাপারে আপনার সুনির্দিষ্ট আপত্তিগুলো কী?


মাহবুব সিদ্দিকী: সুনির্দিষ্ট আপত্তি নদীর সংখ্যা নিয়ে। আমি ৩০ বছর ধরে নদী নিয়ে কাজ করছি। আমার প্রায় কাজই সরজমিন। আমার অনুসন্ধান অনুযায়ী দেশে নদ-নদীর সংখ্যা আমরা ১ হাজার ৯০৮টি পেয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনটি জেলা আছে। এ জেলাগুলোর নদীর সংখ্যা নিয়ে এখনো সঠিকভাবে জরিপ হয়নি। এ তিন জেলার নদীর তালিকা পেলে নদ-নদীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এগুলোর সবই অস্তিত্ব বিদ্যমান। নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় দেশের নদ-নদীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৮টি। তার মানে আরো প্রায় এক হাজার নদ-নদীর নাম তাদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। আমার দ্বিতীয় আপত্তি তাদের তালিকায় থাকা নদ-নদীর বিষয়ে। তাদের তালিকায় ১ হাজার ৮টি নদ-নদীর তালিকা দেয়া আছে। তার মধ্যে ৫৮১টি নদীর উৎসমুখ-পতিতমুখ-মোহনার উল্লেখ নেই। একটা নদী কোথা থেকে উৎপত্তি হলো, কোন জায়গায় তার পতন হলো বা পতিত হলো এটাই তো বেসিক তথ্য। এনআরসিসি এ বেসিক ভুলটা করে বসেছে। এমনিতেই প্রায় ১ হাজার নদ-নদীর নাম বাদ দিয়েছে। যা দিয়েছে তার মধ্যে অর্ধেকেরই বেসিক ইনফরমেশন নেই। এ ভুল কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো না। তৃতীয় আপত্তি হলো বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে গঙ্গার যে অংশ প্রবাহিত হয়েছে, তার পুরোটাকে তালিকায় পদ্মা বলা হয়েছে। এনআরসিসির এটা করার অধিকার নেই। এখন অবধি যারা মানচিত্র প্রকাশ করেন, মানচিত্র তৈরি করেন কিংবা যারা নদী বিশেষজ্ঞ এবং ভূতত্ত্ববিদরা তো এ কথা বলেন না। তারা গোয়ালন্দ পর্যন্ত যে প্রবাহ সেটাকে গঙ্গা বলেন, গোয়ালন্দ এসে উত্তর থেকে যমুনা এল, যমুনা থেকে মিলিত হয়ে যে ধারাটা প্রবাহিত হয়েছে সেটাই পদ্মা নামকরণ হয়ে চাঁদপুরে গিয়ে মেঘনায় মিলিত হলো। মেঘনার নামকরণ করে সে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিলিত হলো। যেকোনো ভূগোলবিদই এ কথা বলবেন। কিন্তু এনআরসিসি বাংলাদেশের ভেতরে গঙ্গার যে অংশটুকু ঢুকেছে, সেই মনাকসা থেকে শুরু করে চাঁদপুরের সম্পূর্ণটাকেই পদ্মা বলছে। এটা অত্যন্ত ভুল সিদ্ধান্ত। ইছামতীকে বলছে দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। এটাও ভুল কথা। ইছামতীকে তারা একেবারে রায়মঙ্গল মোহনা পর্যন্ত ইছামতী বানিয়েছেন। কিন্তু ইছামতী তো মোট তিনটি পৃথক সত্তা নিয়ে প্রবাহিত। ইছামতীর উৎপত্তি হলো মাথাভাঙ্গা থেকে। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় মাঝদিয়া নামক জায়গা আছে। এখানে এসে মাথাভাঙ্গা দুই ভাগে বিভক্ত হলো। একটা চুরনি নামে ভারতে ঢুকে গেল। আরেকটা ইছামতী নামে বাংলাদেশে প্রবাহিত হলো। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us