রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ কিংবা সশস্ত্র হামলার অভিযোগে মূলত বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যেই সকল মামলা হইতেছে, অনেক ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিও আসামি হইবার মধ্য দিয়া উহার সারবস্তু সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা পাওয়া যাইতেছে। আমরা অস্বীকার করিতেছি না– সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটিতেছে না। বিশেষত অবরোধের দিনগুলিতে বাসসহ বিভিন্ন পরিবহন ‘জ্বলন্ত উদাহরণ’ হইয়া উঠিতেছে। কিন্তু যখন মৃত, শয্যাশায়ী কিংবা কারারুদ্ধ ব্যক্তিকেও এই প্রকার মামলায় আসামি করা হয়, তখন ঘটনার সারবস্তু লইয়াই প্রশ্ন উঠিতে বাধ্য। কেবল তাহাই নহে, এই আশঙ্কাও অমূলক হইতে পারে না যে, ভুয়া আসামিকে মামলায় জড়াইবার আয়োজন আসল অপরাধীকে আড়াল করিবার অপচেষ্টা মাত্র।
দেখা যাইতেছে, মামলাকারীরা এতটাই বেপরোয়া হইয়া উঠিয়াছে, প্রয়াত বিশিষ্ট ব্যক্তিগণও এই প্রকার মামলায় আসামি হইতেছেন। সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাইতেছে, বিশিষ্ট আইনজীবী ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া চার বৎসর পূর্বে প্রয়াত হইলেও তাঁহাকে গত ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষে আসামি করা হইয়াছে। একই মামলায় আসামি করা হইয়াছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির একটি ওয়ার্ডের প্রয়াত সহসভাপতি নাসির রহমানকেও। এমনকি যুদ্ধাপরাধের মামলায় দণ্ডিত অবস্থায় প্রয়াত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুস সোবহানকেও একটি মামলায় আসামি করা হইয়াছে। পরিচিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই যেহেতু এইরূপ ঘটিতেছে; সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রে কী ঘটিতে পারে, উহা বুঝিবার জন্য বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। এই প্রকার মামলা ‘গায়েবি’ আখ্যা পাওয়া যথার্থই বটে। প্রায় সকল মামলার এজাহারে একই প্রকার ভাষার ব্যবহারও এইগুলির ‘কপি-পেস্ট মামলা’ নামকরণ সার্থক করিয়াছে।