তরুণ সংগঠক, প্রকাশক আরিফুল ইসলামকে (৪২) চিনত হয়তো কয়েকশ মানুষ। কিন্তু মৃত্যুর পর দেখলাম, যার সাথেই মিশেছে ছেলেটা, তার মনেই দাগ রেখে গেছে। ভালোবাসার সেই দাগ এখন ক্রন্দনরেখা হয়ে বইছে। যে মানুষ নিজেকে অনেকে ছড়ায়, তার মৃত্যু তার একার থাকে না–তার সাথে সাথে অনেকেরও ছোট ছোট মৃত্যু ঘটে যায়। কবরে যায় হয়তো একজন, কিন্তু যারা তাকে শুইয়ে আসে মাটির ঘরে, দুই মুঠ মাটি ফেলে বা দূর থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, তারা কি আগের মতো পূর্ণাঙ্গ থাকে? তাদেরও বুকের ভেতর একটা অদৃশ্য কবর জেগে ওঠে। মনে হয়, বুকের ভেতরের সেই কবরে ঝুরঝুর করে মাটি ঝরছে…ঝরছেই।
দুই বন্ধু কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিল। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল আরিফ, আর বন্ধু সৌভিক করিম (৪২) বসে ছিল পেছনে। আরিফ-নীলা আর ছোট্ট পুত্র নক্ষত্রের সংসার ইস্কাটনে। বড় মগবাজারে বাড়ি সৌভিক করিমের। হয়তো সৌভিককে নামিয়ে বাসায় ফিরবে ভেবেছিল। সেখানেই একটা ট্রাক ওদের মোটরসাইকেলের পেছনে ধাক্কা মারে। ওরা পড়ে যায়। ট্রাকটা যদি সেখানেই থেমে যেত তাহলেও হয়তো বাঁচানো যেত দুটি তাজা প্রাণ। কিন্তু এই দেশে কেউ দায় নেয় না, দায় এড়িয়ে পালানোই এখানকার জাতীয় রীতি। ট্রাক ড্রাইভার পালাতে গিয়ে ওদের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেয় চাকা।
তারপরও কেউ আসেনি। আধা ঘণ্টা অমনই পড়ে ছিল। সৌভিকের মৃত্যু হয় সঙ্গে সঙ্গে। আধা ঘণ্টা পরে এক পুলিশ কর্মকর্তার উদ্যোগে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়। হাসপাতালের পথেও আরিফের শরীরে প্রাণ ছিল। যদি সঙ্গে সঙ্গেই নেওয়া যেত! কিন্তু মরার দেশে জীবন জিয়ানো খুবই কঠিন। আরিফ আর সৌভিক, দুই সহযোদ্ধা,
দুই বন্ধু একসাথে মৃত্যুপথের সহযাত্রী হয়ে গেল।
শোক কী তা জানার বয়স হয়নি ছোট্ট নক্ষত্রের। কিন্তু তার আকাশটা নক্ষত্রহীন হয়ে গেল। বাবাহীন পৃথিবীতে বড় হবে সে। আরিফ আর নীলার কী সুন্দর এক পরিবার। দু’জনই বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন করত। রেবেকা নীলা গানের দল সমগীতেরও সদস্য। সুন্দর গান গায়। আরিফ ছিল ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য। প্রকাশনা সংস্থা সংহতি গড়ে তুলছিল। পরে যোগ দেয় ইউপিএল প্রকাশনায়।