আল-শাতি শরণার্থীশিবিরে আমি শেষবার গিয়েছিলাম ২০১৩ সালের প্রথম দিকে। গাজার উত্তরে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত শরণার্থীশিবিরটি ‘বিচ ক্যাম্প’ নামে পরিচিত ছিল। সেখানে ফল ব্যবসায়ীরা নানা রঙের ছাতার নিচে বসে ফল বিক্রি করতেন। বিড়ালগুলো সরু গলির মাঝখানে ঘুমাত। শিশুরা দড়িলাফসহ নানা ধরনের খেলাধুলা করত।
নাকবাতে সাড়ে ৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোর করে বাস্তুচ্যুত করার পর ১৯৪৮ সালে বিচ ক্যাম্পটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে শিবিরে প্রায় ২৩ হাজার শরণার্থীকে স্থান দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সাত দশকে এই সংখ্যা ৯০ হাজারে পৌঁছায়। মাত্র শূন্য দশমিক ২ বর্গমাইল জায়গার মধ্যে এত মানুষ থাকত।
গাজার জনগণ ১৬ বছর ধরে অবরোধের মধ্যে বসবাস করছে। ইসরায়েল দখলদারি বজায় রাখতে গাজার ভেতরে ও বাইরে যা আছে এর বেশির ভাগই নিয়ন্ত্রণ করছে। বিচ ক্যাম্পও আলাদা কিছু ছিল না। সেখানকার লোকেরা বেঁচে থাকার জন্য ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সির সাহায্য এবং পরিষেবার ওপর নির্ভর করত। এসব পরিষেবার মধ্যে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র এবং বেশ কয়েকটি স্কুল ভবন ছিল।
বিচ ক্যাম্পের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো। আমাকে স্কুলটির ছাদে উঠতে দেওয়া হয়েছিল, যেখান থেকে আমি একপাশে ইসরায়েলের বেড়া দেখতে পেয়েছিলাম। সমুদ্রে বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি টহল নৌকা দেখেছিলাম। পরে জেনেছি, এসব নৌকা ফিলিস্তিনি জেলেদের ছয় নটিক্যাল মাইলের বেশি যেতে দিত না।
স্কুলটি চালাতেন কয়েকজন অনুপ্রেরণাদায়ী ও কঠোর পরিশ্রমী শিক্ষক, যাঁদের দর্শন ছিল আবিষ্কার, সংগীত, থিয়েটার এবং শিল্পের জন্য একটি শান্ত পরিবেশ তৈরি করা। কয়েকজন ছাত্র আমাকে তাদের কাজ দেখিয়েছিল। তাদের ড্রয়িং খাতায় অনেক বিমান, বেড়া ও বোমার ছবি আঁকা ছিল। তবে অন্যান্য জিনিসও তারা এঁকেছিল: তাদের বাবা-মা, ভাই-বোন ও বন্ধুদের ছবি। স্পষ্টতই, সব শিশু ট্রমায় ভুগছিল, তবে তাদের শেখার, ভাগ করে নেওয়া এবং খেলার ইচ্ছাও ছিল।