গ্রামে একটি প্রাবাদিক কথা চালু আছে। ক্ষেতের ফসল রক্ষার বেড়ায় যদি শস্য খেয়ে ফেলে, তাহলে উৎপাদক কৃষক কার ওপর ভরসা করবে? প্রবাদ হচ্ছে সত্যের সংহত রূপক। বেড়ায় ক্ষেত খেয়েছে বা ফসল খাচ্ছে- এ প্রবাদটি আমরা ব্যাংকিং খাতের জন্য প্রশাসন ও সরকারি দফতরের বিপরীতেও এ রক্ষক হয়ে ভক্ষকের চরিত্রে ঢুকে পড়াটাও লক্ষ্য করছি। বহু উদাহরণ দেওয়া যায়। তার মধ্যে সব থেকে বড় উদাহরণ হতে পারে সরকার নিজেই।
সরকার নিজেই দেশের গণমানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে পারছেন না। সেটা স্বীকার করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি প্রকাশ্যে বললেও শিল্পমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বলছেন না যে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন, তারা সেই ঋণ ফেরত দিচ্ছেন না। ২০১০-এ যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার প্রথম বছর কাটায় তখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। মাত্র ১২-১৩ বছরে সেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা।
তার মানে গত ১৪-১৫ বছরে সোয়া লাখ কোটি (প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা) টাকা ঋণ খেলাপির পেটে গেছে। এ খেলাপিদের তালিকা করে প্রকাশ করলে কি শিল্প ও ব্যবসা খাতে ধস নামবে? আর সে কারণেই কি সরকারের শিল্পমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী তাদের ইজ্জত রক্ষার জন্য খেলাপিদের আয়েসে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেননি? এই খেলাপিরা কেবল দেশের শিল্পপতি, বড় ব্যবসায়ী? আমদানিকারক, রফতানিকারকও কি সেই তালিকায় আছেন? এবং সরকার নিজেও তো ঋণ খেলাপি! নয় কী?
বুঝে দেখুন, ১৯৭২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৩৮ বছরে যারা ঋণ নিয়ে ফেরত দেননি, হজম করেছে ২১ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে বাদবাকি ঋণ নিয়ে তা খেলাপি করে হজম করেছে। সরকার বা সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মহাব্যবস্থাপকরা তাদের দেওয়া ঋণ ফেরত আনতে পারছেন না। বলা যায় ফেরত তারা আনছেন না। কেন তারা আনতে পারছেন না, কেন তারা আনেন না, সেই অনীহার একটি কারণ নিচে উদ্ধৃত রিপোর্টে মেলে।