গত ৩০ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্রতম দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়। নির্বাচনে ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন বিরোধী প্রোগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপ (পিপিএম) দলের প্রার্থী মোহাম্মদ মুইজ্জো। অপরদিকে ক্ষমতাসীন মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ পেয়েছেন ৪৬ দশমিক ২৭ শতাংশ ভোট। মালদ্বীপের সংবিধান অনুযায়ী, ৯ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রথম দফায় কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ করা হয়। এবারের নির্বাচনে মালদ্বীপের মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৫৫ জন; যা বাংলাদেশের যে কোনো একটি সংসদীয় আসনের ভোট আয়োজনের সমান বলা যায়। এ নির্বাচনে দেশটির প্রধান দুই দলসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দল ও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন।
বলা হয়ে থাকে, পিপিএম প্রধান আবদুল্লাহ্ ইয়ামিন ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মালদ্বীপ চীনঘেঁষা হয়ে পড়ে। সে সময় থেকেই ইয়ামিন মালদ্বীপে চীনের বাণিজ্যিক স্বার্থরক্ষা করে আসছিলেন। বর্তমানে, মুইজ্জোকে বলা হচ্ছে ইয়ামিনের অনুসারী। ইয়ামিন এবারও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু দুর্নীতির দায়ে জেল খাটছেন বলে আদালতের সিদ্ধান্তে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। এভাবেই পিপিএমের পক্ষে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ঘটে মুইজ্জোর। মুইজ্জো বর্তমানে মালদ্বীপের রাজধানী মালের মেয়র। নির্বাচনে বিজয়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুইজ্জো ইয়ামিনের মুক্তি নিশ্চিত করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইয়ামিনের পরাজয়ের মাধ্যমে ভারতপন্থি হিসাবে পরিচিত ইব্রাহিম সোলিহ ক্ষমতায় আসীন হলে মালদ্বীপ পুনরায় ভারতের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সে সময় বলা হয়েছিল, আবদুল্লাহ্ ইয়ামিনের পরাজয়ের মধ্যদিয়ে মালদ্বীপে ভারতের কূটনৈতিক বিজয় হয়েছিল। ভারতের গণমাধ্যমগুলোও ইব্রাহিম তুষ্টিতে সরব হয়ে উঠেছিল। তারা ইব্রাহিমকে মালদ্বীপের আধুনিক রাজনীতির অন্যতম সংস্কারক হিসাবে আখ্যায়িত করেছিল। তবে এবারের নির্বাচনে মুইজ্জো বিজয়ী হওয়ায় ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো চোট পেয়েছে বলে মনে হয়। মালদ্বীপের নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর তাদের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রাজনৈতিক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনগুলো পড়ে তাই মনে হয়েছে। চীনঘেঁষা দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো দেশ বা সে দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সব সময়েই ভারতের জন্য পীড়াদায়ক হয়ে দাঁড়ায়। ভারত মূলত তার অর্থনৈতিক এজেন্ডা সামনে রেখে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।