টের পাচ্ছি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ভবিষ্যৎ নাগরিকদের বারোটা বাজাবে। এগারোটা যে বেজে গেছে, তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব র্যাঙ্কিং থেকেই বোঝা যায়। জ্ঞান সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ আপাতত খুব একটা চোখে পড়ছে না। খুব কমসংখ্যক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেন।
বাকিরা শিক্ষকতা করেন, বিনিময়ে বেতন পান। বেতন পাওয়ার জন্য শিক্ষাদান-প্রক্রিয়া বুঝিয়ে দেয় যে জীবনযাপনের চাহিদা মেটানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকের যে কাজ, সেই জ্ঞান সৃষ্টি ও গবেষণা কতটা এগিয়ে নেওয়া হয়, সেই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর নেই।
সম্ভবত পরিশ্রম বাদ দিয়ে চ্যাট-জিপিটি ধরনের প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা আমাদের পড়াশোনা করব ভবিষ্যতে। একটা সমস্যা দেওয়া হবে মোবাইলে থাকা প্রযুক্তি মহাশয়কে। তিনিই তাঁর তথ্যভান্ডার থেকে তৈরি করে দেবেন একটি সুলিখিত বক্তব্য। করে দেবেন সুখকর গবেষণা। ব্যস! কাজ শেষ।
শিক্ষকদের নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর। তাঁদের গবেষণার মান নিয়েও নিরাশাসূচক লেখালেখি দেখেছি অনেক। যে গবেষণা নতুন ভাবনার দ্বার খুলে দেবে, যে ভাবনা নিয়ে যোগাযোগমাধ্যমে, সমাজে-রাষ্ট্রে উঠবে আলোড়ন, সেই ভাবনার জন্ম কি হচ্ছে আমাদের শিক্ষালয়গুলোয়? আমাদের শিক্ষকেরা টক শোতে যতটা সক্রিয়, নিজ ক্লাসে ততটা আন্তরিক কি না, সে রকম প্রশ্নও তো ওঠে মাঝে মাঝে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ধরে রাখার মতো শিক্ষকের সংখ্যা তো কমে গেছে। একজন মানুষ কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারেন, তার উদাহরণ আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই তো আছে। একটু ইতিহাস ঘেঁটে দেখলেই সে রকম শিক্ষকদের দেখা পাওয়া যাবে। সেই কাহিনিগুলো গর্বের। তাঁদের সমকক্ষ শিক্ষক হয়ে ওঠার তাগিদটাও আজকাল নেই।
কিন্তু কেন এমনটা ঘটছে, সে কথা খুব ভাবা হয়েছে বলে মনে হয় না। ভাবা হলেও তাকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তারও জবাব পাওয়া যাবে না।