১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখের দৈনিক বণিক বার্তায় হেডলাইন খবর ছিল ‘আর্থিক সংকটের সময় দেশে বিলিয়নেয়ার আরো বেড়েছে’। ওই খবরে সুইজারল্যান্ডের ইউবিএস ব্যাংকের ২০২৩ সালের সর্বশেষ তথ্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে ১ কোটি ডলার (১১০ কোটি টাকা) থেকে ৫০ কোটি ডলারের (সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা) বেশি পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এমন ধনকুবেরের সংখ্যা ২০২১ সালের ৫০৩ জন থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৫২৯ জনে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালে ৫ কোটি ডলার থেকে ১০ কোটি ডলার (৫৫০ কোটি থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা) পর্যন্ত সম্পদ ছিল এমন ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৪০ জন। প্রায় দেড় দশক ধরে ব্যবসায়িক কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্পদশালীদের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে সুইজারল্যান্ডের জুরিখভিত্তিক ক্রেডিট সুইস ব্যাংক। এ সম্পদশালীদের পরিসংখ্যান নিয়ে তারা একটি ডাটাবেজ তৈরি করেছে, যা প্রকাশিত হয় ‘গ্লোবাল ওয়েলথ রিপোর্ট’ শিরোনামে। ২০২২ সালে ক্রেডিট সুইস ব্যাংককে অধিগ্রহণ করেছে আরেক সুইস ব্যাংক ইউবিএস। ফলে ২০২৩ সালে এবার সম্পদশালীদের সর্বশেষ ডাটাবেজ প্রকাশ করেছে ইউবিএস। এ সর্বশেষ তথ্যে বাংলাদেশে ৫০ কোটি ডলার বা সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে ২২ জন ব্যক্তির কাছে। অন্যদিকে এ তথ্য মোতাবেক ২০২২ সালে ৫৫ কোটি টাকা থেকে ১১০ কোটি টাকার সম্পদ ছিল ১ হাজার ১৫৬ জনের কাছে।
এ তথ্যগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যাক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ওয়েলথ এক্স’-এর ২০১৮ সালের প্রকাশিত বাংলাদেশের ধনকুবেরদের সংখ্যার প্রবৃদ্ধির চিত্রটি। ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ‘বিশ্বে ধনকুবেরের সংখ্যার প্রবৃদ্ধির হারের শীর্ষে বাংলাদেশ’ শীর্ষক হেডলাইন সংবাদে জানানো হয়েছে, ‘ওয়েলথ এক্স’-এর প্রতিবেদন ওয়ার্ল্ড আল্ট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮ মোতাবেক ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ এই পাঁচ বছরে অতিধনী বা ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির দিক দিয়ে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে পেছনে ফেলে সারা বিশ্বে এক নম্বর স্থানটি দখল করেছিল বাংলাদেশ। ওই গবেষণা প্রতিবেদনে ৩০ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ডলারের (প্রায় ২৫৫ কোটি টাকা) বেশি নিট সম্পদের অধিকারী ব্যক্তিদের ‘আল্ট্রা-হাই নেট-ওয়ার্থ’ (ইউএইচএনডব্লিউ’) ইন্ডিভিজুয়াল হিসেবে অভিহিত করে বলা হয়েছে, বিশ্বে মোট ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫৫ জন ইউএইচএনডব্লিউ ইন্ডিভিজুয়ালের সবচেয়ে বেশি ৭৯ হাজার ৫৯৫ জন রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপান, তাদের ধনকুবেরের সংখ্যা ১৭ হাজার ৯১৫ জন। তৃতীয় থেকে দশম স্থানগুলোয় রয়েছে গণচীন (১৬ হাজার ৮৭৫ জন), জার্মানি (১৫ হাজার ৮০ জন), কানাডা (১০ হাজার ৮৪০ জন), ফ্রান্স (১০ হাজার ১২০ জন), হংকং (১০ হাজার ১০ জন), যুক্তরাজ্য (৯ হাজার ৩৭০ জন), সুইজারল্যান্ড (৬ হাজার ৪০০ জন) ও ইতালি (৫ হাজার ৯৬০ জন)। এই ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫৫ জন ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ, কিন্তু তাদের সম্পদ বৃদ্ধির হার ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়ে ২০১৭ সালে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে। ওই পাঁচ বছরে ধনকুবেরের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গণচীনে ও হংকংয়ে, কিন্তু ধনকুবেরের সংখ্যার বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল বাংলাদেশে। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ধনকুবেরের সংখ্যা ছিল ২৫৫ জন। এ দেশের ধনকুবেররা যেভাবে নানাবিধ কৌশলে ধন-সম্পদ লুকিয়ে ফেলে তার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি।