গত কয়েক বৎসরে ঢাকা ওয়াসা যেই সকল ‘কীর্তি’ স্থাপন করিয়াছে, পানির মিটারের মূল্য এক লম্ফে প্রায় দ্বিগুণ কিংবা বিভিন্ন সেবা গ্রহণের আবেদনপত্রের মূল্য পাঁচ গুণ করিবার বিষয়টি সেই তুলনায় ‘শিশুতোষ’ মনে হইতেই পারে। এই সংস্থা হইতে সরবরাহকৃত পানির গুণ ও পরিমাণগত মান লইয়া অভিযোগ সত্ত্বেও যখন উহার মূল্য ১৩ বৎসরে ১৪ বার বৃদ্ধি পায়, তখন মিটার কিংবা আবেদনপত্রই বা পিছাইয়া থাকিবে কেন? স্বীকার্য, বিধি প্রণয়ন ব্যতিরেকে পানির মূল্যবৃদ্ধি এবং কর্মচারীদের ‘পারফরম্যান্স বোনাস’ প্রদানে চলতি বৎসরের মার্চে নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছিলেন উচ্চ আদালত। কিন্তু তথায় তো মিটার ও আবেদনপত্রের মূল্য লইয়া কিছু বলা হয় নাই! প্রবাদে নাকের বদলে নরুনপ্রাপ্তির আদ্যোপান্ত আমরা জানি; ওয়াসার ক্ষেত্রে পানির পরিবর্তে মিটার মিলিলে ক্ষতি কী?
এই ক্ষেত্রে ওয়াসার মহামহিম ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তাঁহার গগনবিদারী ক্ষমতার কথাও বিস্মৃত হইবার অবকাশ নাই। চলতি মাসের প্রথমেই তিনি একাদিক্রমে সপ্তম মেয়াদের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হইয়াছেন। গত ১২ বৎসরে যাঁহার বেতন ৪২১ শতাংশ বাড়িয়াছে, তিনি চাহিলেই সেবার মূল্য বৃদ্ধি করিতে পারিবেন না কেন? এটা ঠিক, ওয়াসার সেবার মূল্য বৃদ্ধি করিতে হইলে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু উহার একজন সদস্য সমকালকে জানাইয়াছেন, এইরূপ কোনো আলোচনার কথা তাঁহার স্মরণে নাই। অবশ্য স্মরণ না থাকাই নিরাপদ। আমরা দেখিয়াছি, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার স্মরণে রাখিয়া মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানাইতে গিয়া ওয়াসার ভূতপূর্ব চেয়ারম্যানের কী পরিণতি ঘটিয়াছে। চলতি বৎসর মে মাসে ওয়াসার পরিস্থিতি সম্পর্কে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানাইবার পঞ্চম দিবসে তাঁহাকে বিদায় লইতে হইয়াছে।