প্রতি বছর ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ একটি মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে দেয়। এ বছরও তার অন্যথা হয়নি। আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য– Indigenous Youths as Agents of Change for Self-determination, যার বঙ্গানুবাদ করা হয়েছে– ‘আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠায় আদিবাসী তরুণরাই মূল শক্তি’। এটি একেবারে আক্ষরিক না হলেও মর্মার্থগতভাবে মূল প্রতিপাদ্য। এ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত ‘সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ’ অনুযায়ী একটি স্বীকৃত মানবাধিকার। এ ছাড়া ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ঘোষিত ‘আদিবাসী অধিকার সনদ’-এর ৩ নম্বর ধারায়ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ অনুযায়ী বিশ্বের সব মানুষ সব মানুষের কাছে সমান, সেহেতু আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পৃথিবীর দেশে দেশে ন্যাশনাল মেজরিটির আছে, কিন্তু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নেই– এটা কখনও হতে পারে না। আন্তর্জাতিক আদিবাসী অধিকার সনদ অনুযায়ী যেহেতু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু পৃথিবীর সব আদিবাসী জনগোষ্ঠী আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রাখে।
২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে পুনরায় সামনে আনা হয়েছে এবং আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠায় আদিবাসী তরুণ সমাজকে এগিয়ে এসে নিজেদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে সক্রিয় হওয়ার মধ্য দিয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠায় জোরদার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। মূল প্রতিপাদ্য সামনে রেখে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রথমত, জলবায়ু পরিবর্তন ও সবুজ রূপান্তরের (ক্লাইমেট অ্যাকশন ও গ্রিন ট্রানজিশন) কথা বলা হয়েছে। কেননা, বিশ্বব্যাপী জমি, জল, জঙ্গল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মৌলিক জীবনাচারের অংশ এবং জীবিকার প্রধান উপকরণ। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা সংকটের মুখে পড়তে পারে বলে তরুণ আদিবাসীদের সবুজ রূপান্তরে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য তীব্র তাগিদ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে সম্পৃক্তকরণ (মোবিলাইজেশন অব জাস্টিস), যার মাধ্যমে বিশ্বের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, শোষণ, বঞ্চনা ও নির্যাতনের যে গ্লানিকর ইতিহাস আছে, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং আদিবাসী তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তৃতীয়ত, আন্তঃপ্রাজন্মিক যোগাযোগ (ইন্টারজেনারেশনাল কমিউনিকেশন), যার মাধ্যমে বয়স্কদের অভিজ্ঞতা ও তরুণদের তারুণ্যদীপ্ত প্রাণশক্তির সমন্বয়ে একটি সুন্দর আন্তঃপ্রাজন্মিক যোগাযোগ স্থাপনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যেখানে তরুণ আদিবাসীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।