বাংলাদেশে সংবাদপত্রের জগতে যারা পুরোধা, যশস্বী, তাদের শ্রেষ্ঠতমদের সারিতে চিরদিনের জন্য সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের [১ এপ্রিল, ১৯৪৩-১৩ আগস্ট, ২০১৮] নামটি লিখিত হয়ে গেছে। কবে, কোথায় প্রথম তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল, সে কথা আজ আর মনে না থাকলেও, যা মনে আছে তা হলো– দেখা হওয়ার প্রথম দিনটিতেই সারওয়ার ভাই আমাকে কাছের করে নিয়েছিলেন, যেন আমাদের কতকালের জানাশোনা! সেদিন তাঁর ব্যক্তিত্ব আমার ভেতর গাঢ় রেখাপাত করেছিল এবং আজও অনুভব করি, মৃত্যুর পাঁচ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও তিনি আমার হৃদয়ে একই রকম জীবন্ত, প্রাণবান।
সম্ভবত ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক তিনি, যখন তাঁর সঙ্গে প্রথম দেখা। সেই শুরু। এরপর যতবার দেখা হয়েছে, রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য নিয়ে ছোট-বড় আলাপ হয়েছে, তাঁর কথা ঋদ্ধ করেছে আমাকে। বিভিন্ন সময়ে অনেক অপ্রিয় প্রসঙ্গও সেসব আলাপে উঠে এসেছিল এবং দ্বিমত হয়েছি তাঁর সঙ্গে, ব্যক্তও করেছি। তবু কখনও আমার প্রতি তাঁর স্মিত, সস্নেহ হাসিটি ম্লান হতে দেখেনি। তাঁর ভেতর আরেকটি বিষয় দেখেছি, যে প্রসঙ্গে বলতে হলে এশিয়ায় সাংবাদিকতার দিকপালদের অন্যতম, বাংলাদেশে ইংরেজি সাংবাদিকতার পথিকৃৎ সৈয়দ মোহাম্মদ আলীর একটি কথা আমার মনে পড়ে। এসএম আলী আমাকে বলেছিলেন, একজন সাংবাদিকের অনেক গুণ থাকতে হয়। তার একটি ধৈর্য, অন্যটি স্থিরচিত্ততা। হয়তো মনের ভেতর কোনো ঘটনা বা বিষয় নিয়ে তোলপাড় চলছে। কিন্তু মুখ দেখে যেন বোঝা না যায়– তিনি এসবে প্রভাবিত হয়ে পড়েছেন। সারওয়ার ভাইয়ের মাঝে এসএম আলীর বলা এ দুটি গুণ আমি পূর্ণরূপে বিকশিত দেখেছি। সীমাহীন ধৈর্য আর স্থিরচিত্ততায় গোলাম সারওয়ার ছিলেন একজন আদর্শ সাংবাদিক এবং পরিপূর্ণ মানুষ।