ফুটবলের আকাশে কত তারার আসা-যাওয়া; কেউ যুগ যুগ ধরে সেখানে আলো ছড়িয়ে যান, কেউ আবার কয়েক বছর পর হাওয়ায় মিলিয়ে যান। তবে জ্বলার পর নিভে যাওয়া তারাদের মানুষ একেবারে ভুলতে পারে না। তেমনই তিন তারার আলো-ছায়ার গল্পটা সমকাল পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন জহির উদ্দিন মিশু
গোল্ডেনবয় রদ্রিগেজ
২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের দিনগুলো ফুটবলপ্রেমীদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা। বিশ্বকাপের ঠিক আগে মোনাকোর বিস্ময়বালক হামেস রদ্রিগেজকে নিয়ে তুমুল আলোচনা। ট্রান্সফার উইন্ডোতে সোপ অপেরায় রূপ পায় তাঁর রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার গুঞ্জন। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের আগেই লস ব্লাঙ্কোসদের সঙ্গে কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়ে যায় হামেসের। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৩। তরুণদের দলে ভেড়ানোর ঐতিহ্যটা রিয়ালের পুরোনো। তারা হামেসের বেলায়ও একই কাজ করে। তখন এই কলম্বিয়ানের বাজারমূল্য ছিল ৬০ মিলিয়ন ইউরো। কিন্তু তাঁকে নিতে আরও কয়েকটি ক্লাব আগ্রহ দেখায়। সে জন্য দামটা বাড়িয়ে ৭৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে হামেসকে নিজেদের করে নেয় রিয়াল। নতুন ক্লাবে যোগদানের আনুষ্ঠানিকতা বিশ্বকাপের পর– এমন ভাবনা নিয়েই বিশ্বকাপের মঞ্চে পা রাখেন হামেস। এরপরের দৃশ্যটা সবার জানা। কলম্বিয়া শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিলেও হামেস গুনে গুনে করেন ৬ গোল, যা কিনা ওই আসরের সর্বোচ্চ। তাতে গোল্ডেন বুটও যায় তাঁর হাতে। এরপর তো রিয়ালে দাপট দেখানো। ছিলেন ২০২০ অবধি। কিন্তু ফর্মের কিছুটা হেরফেরে তাঁকে আর রাখেনি রিয়াল। এরপর আর নিজের ফর্মটা ফিরে পাননি। সর্বশেষ ব্রাজিলের ক্লাব সাও পাওলোতে যোগ দিয়েছেন হামেস।
সুপার আলি
ডেলে আলির ক্যারিয়ারটা ছিল যুদ্ধের। ব্যক্তি জীবনেও তিনি লড়াকু এক যোদ্ধা। সেই শৈশব থেকে নানা বাধা-বিপত্তি জয় করে ইংল্যান্ডের ফুটবল দলে জায়গা করে নেন। সেখানেও বেশি দিন স্বমহিমায় থাকা হয়নি, খেলা হয়নি বেশি ম্যাচ। কোচের সঙ্গে বৈরিতা, সতীর্থদের নাক ছিটকানো আর দুঃস্বপ্নের অতীত বারবার তাঁর হৃদয়কে করেছে ক্ষত-বিক্ষত। কয়দিন আগে যখন হন্যে হয়ে ক্লাব খুঁজছেন, তখন এক সাক্ষাৎকারে এসব দিক নিয়ে কথা বলেন আলি। জানান, ছোটবেলায় যৌন হয়রানির শিকারও হতে হয়েছে তাঁকে। তবু সব হতাশা বুকের মধ্যে চেপে ছুটেছেন স্বপ্ন জয়ের আশায়। সুপার আলি– টটেনহামের ড্রেসিংরুমে খুব ভালোবেসে কয়েকজন সতীর্থ তাঁকে এই নামে ডাকতেন। ভীষণ চনমনে স্বভাবের আলির বর্ণিল সময়টা ছিল স্পার্সদের সঙ্গেই। গোল করে দুর্দান্ত উদযাপন, কিংবা বল বানিয়ে দিয়ে টাচলাইনের দিকে ভোঁ দৌড়, সেসব দৃশ্য এখন হয়তো ভিডিওতে দেখেন আলি। ২০১৫ সালে টটেনহামে যোগ দেওয়ার পর ২০২২ পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। শেষটা তাঁর ছিল না রঙিন। ২০০ ছুঁইছুঁই ম্যাচ খেলে অর্ধশতাধিক গোল করা আলিকে ছুড়ে ফেলে টটেনহাম। সর্বশেষ তুরস্কের বেসিকতাসে নাম লিখিয়ে আবার এভারটনে ফিরতে হলো। এখন বাকি দিন কীভাবে কাটবে, সেটাই বোধহয় ভেবে কূল পাচ্ছেন না ২৭ বছর বয়সী এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার।
ব্লুজমেকার হ্যাজার্ড
ছবির মতো সুন্দর সময় ছিল এডেন হ্যাজার্ডের, যখন তিনি চেলসিতে। ব্লুজদের মেকারও বলা যায় তাঁকে। পুরো মাঠ একাই নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সবচেয়ে কার্যকরী ড্রিবলার এবং প্লেমেকারও হন প্রিমিয়ার লিগে। সাত বছরের স্টামফোর্ড ব্রিজ অধ্যায়ে ১৪৪১ বার কেবল গোলের সুযোগই তৈরি করেন। ৯০৯টি সফল ড্রিবলিং, যা কিনা প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে বড় তারকাদেরও নেই। সেই হ্যাজার্ড হঠাৎ হারিয়ে গেলেন। রিয়াল রেকর্ড ফি দিয়ে তাঁকে কিনেছিল। মৌসুমের পর মৌসুম চোট আর অফফর্মের সাগরে হাবুডুবু খেয়ে মাদ্রিদ ছাড়তে হলো। এখন নেই কোনো ক্লাবের সঙ্গেও।