আমাদের স্বাধীনতার বয়স ৫২ বছর। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বৈষম্য ও জুলুমের শাসন কায়েম করে মানুষকে অধিকারহীন, মর্যাদাহীন করে দাবিয়ে রেখে মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী অনুগত ব্যক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল বলেই তো আমরা পাকিস্তানি জিঞ্জির ভাঙার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিলাম। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসে আমরা কি এটা সত্যি দাবি করতে পারি যে আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হয়েছি?
আমাদের দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এই দুই দলের মধ্যে বনিবনা নেই, সদ্ভাব নেই—এটা সবারই জানা। এই দুই দল পর্যায়ক্রমে একাধিকবার দেশ শাসন করলেও জাতীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দুটি দলের মধ্যে ঐক্য ও সমঝোতা নেই, অচিরেই কোনো ধরনের সমঝোতা হবে, তারও কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
এখন শাসনক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ একটি রেকর্ড তৈরি করেছে। আবার ক্ষমতায় থেকে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল বিএনপি ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে আছে এবং দলটি টিকে আছে—এটাও কম কথা নয়। কোনো কোনো রাজনৈতিক পণ্ডিত মনে করতেন, বেশি দিন ক্ষমতার বাইরে থাকলে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। ব্যক্তিগতভাবে আমি অবশ্য তা মনে করি না। বিএনপি যে রাজনৈতিক ধারার প্রতিনিধিত্ব করে, সেই রাজনীতি অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধিতার রাজনীতি দেশে তত দিন বহাল থাকবে, যত দিন আওয়ামী লীগ থাকবে।
সাদাচোখে দেখে দুই দলের আচার-আচরণ প্রায় এক বলে মনে হলেও দুই দলের আদর্শিক অবস্থানে ভিন্নতা আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে স্বজনপ্রীতি, ঘুষ-দুর্নীতি, দলবাজি-দখলবাজি করে—বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও তা-ই করে। দুর্নীতি এবং ক্ষমতা সম্ভবত হাত ধরাধরি করে চলে। এটা শুধু বাংলাদেশের বিষয় নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্নীতি এখন একটি বড় বিষয়। ক্ষমতা থাকলে দুর্নীতিও থাকবে। দুর্নীতির মাত্রা কী হবে, তা বিতর্কের বিষয় হতে পারে। কিন্তু দুর্নীতি করে বলেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এক হয়ে গেল—এই সিদ্ধান্ত অতি সরলীকরণ দোষে দুষ্ট এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় ভ্রান্ত।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুকূলে যতটা নীতি-পদক্ষেপ গ্রহণ করে, বিএনপি কি তা করে? বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ কি দুই শাসনামলে এক হয়? কৃষকসহ শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ কোন আমলে বেশি রক্ষিত হয়? জাতীয় অগ্রগতির জন্য জরুরি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কোন আমলে অগ্রাধিকার পায়? মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী, জঙ্গিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি—এগুলো কি বিএনপির কাছে আশা করা যায়? ১৫ আগস্টের বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বছরের পর বছর ঝুলে থাকা বিরোধ নিষ্পত্তিতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির অবস্থান কি এক?