কোনো মানুষই সংস্কৃতিবিহীন নয়; নয় শ্রেণি-নিরপেক্ষও। সংস্কৃতি জাতীয়তার পরিচয়ন বহন করে। আর শ্রেণি সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ করে। জাতীয়তার প্রধান উপাদান হচ্ছে ভাষা। ভাষা সংস্কৃতির অনিবার্য অংশ। ভাষা আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। ভাষাই আমাদের নিকটবর্তী করে তোলে। পরস্পরের যোগাযোগ, আদান-প্রদান, চিন্তার বিনিময় ইত্যাদিতে ভাষার বিকল্প নেই। নিজ মাতৃভাষা যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ও সাবলীলভাবে পরস্পরকে একাত্ম করতে পারে, ভাষা ভিন্নতায় সেটি সম্ভব হয় না। তাই ভাষা মানুষের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবেই বিরাজ করছে।
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। দেশের জনসংখ্যার সর্ববৃহৎ অংশ বাঙালি। এর পাশাপাশি ভিন্ন কয়েকটি জাতিসত্তার মানুষও এ দেশে বসবাস করে। তাদের আমরা উপজাতি বলে থাকি। তারাও অনিবার্যরূপে জাতি। ক্ষুদ্র বলেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে তাদের অবজ্ঞা করে থাকি। সেটি জাত্যাভিমান ছাড়া অন্য কিছু নয়। ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে অবশ্যই স্বীকার ও স্বীকৃতি দিতে হবে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর ভিত্তিতে বিবেচনা করা অন্যায়। নয়তো ক্ষমতার দাম্ভিকতায় পাকিস্তানি শাসকদের থেকে আমাদের পার্থক্যটা রইল কোথায়! ভাষা প্রতিটি জাতিসত্তার মানুষের জন্মগত অধিকার। ভাষা অর্থাৎ জাতীয়তার অধিকার হরণের অজস্র ঘটনা বিশ্বব্যাপী ঘটে চলেছে। ভাষার আধিপত্যে বিশ্বে জাতীয়তার সংকটে বিভিন্ন ভাষাভাষী আক্রান্ত পর্যন্ত হচ্ছেন। যেমনটি আমাদের মাতৃভাষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে উর্দু ভাষা চাপানোর চেষ্টা হয়েছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর পরই। আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলে মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছিলাম ত্যাগ ও আত্মত্যাগে।