প্রতিবছর ঈদে হাজার হাজার মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফেরেন, এবারের ঈদেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদযাত্রা যেন না হয় বিষাদের, ঈদে মানুষের বাড়ি ফেরা এবং শহরে ফেরা হোক আনন্দের। প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল থেকে বাড়িতে আসা-যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে, এবারের রোজার ঈদেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর ঈদুল ফিতরের ১৪ দিনে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২৮৫ জন নিহত ও ৪৫৪ জন আহত হয়েছেন। এ পরিসংখ্যানে দেখা যায় মোট দুর্ঘটনার ৫২.৯১% মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট, যেখানে ৪৬.৬৬% মৃত্যু ঘটেছে। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, দুর্ঘটনায় জড়িত বিভিন্ন যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেল ৩২.১১%, বাস ১৪.১২% এবং তিন চাকার মোটরযান ১৬.৮৫%। বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, যথাক্রমে ২৮.৩৩% এবং ২৬.৩১%।
সড়ক দুর্ঘটনা এখন মহামারির রূপ নিয়েছে যা দেশে সব বয়সী মানুষের মৃত্যুর অষ্টম প্রধান কারণ। এসব ঘটনায় নিহতদের অধিকাংশ ১৫-৩০ বছর বয়সী। গত ২৯ মে এসএসসি পরীক্ষার্থী দুই বন্ধুর জীবন কেড়ে নিলো মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, তাদের আরেক বন্ধু একই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
সড়ক দুর্ঘটনা একটি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ, তাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একে প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং এর ফলে মৃত্যু ও আহতের সংখ্যাও কমিয়ে আনা যায়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার নতুন আইন (সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮) ও বিধিমালা (সড়ক পরিবহন বিধিমালা ২০২২) প্রণয়ন করেছে। এ আইন ও বিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে দেশের সড়কগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ হয়ে উঠবে তাতে সন্দেহ নেই। তবে সরকারের একার পক্ষে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য জোরদার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, যা সড়কের নিরাপদ ব্যবহারে আমাদের সচেতন করবে। মানুষের সক্রিয় সচেতনতাই পারে সড়কে মৃত্যুর মিছিল রোধ করতে এবং পঙ্গুত্বের হাত থেকে শত শত মানুষকে রক্ষা করতে।