অতিকথন বলে একটা প্রচল আলাপ রয়েছে, যাকে বলা যায় অতিশয়োক্তি। অর্থাৎ বাড়িয়ে বলা। আবার যা না তা বলাকে বলা যায় বিকৃতি। যেমন লাখে লাখে সৈন্য মরার গল্পে গোনাগুনতি শেষে দেখা যায় মোটে চল্লিশ হাজার পুঁথিসাহিত্যের এই বাক্য এত চেনা যে তা আর উদ্ধৃত করলাম না। কিন্তু এই অতিকথন এখন সমাজে বিভিন্ন পেশাজীবীর মধ্যে এমন মাত্রায় ছড়িয়েছে, তা মাঝে মাঝে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে যারপরনাই বেকায়দায় ফেলে দেয়। এ প্রসঙ্গে ইংরেজ রাজনীতিবিদ ও লেখক উইনস্টন এস চার্চিলকে স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন, A good speech should be like a woman’s skirt; should be long enough to cover the subject and short enough to create interest.. বিভিন্ন পরিস্থিতি, নানা ঘটনায় রাজনীতিবিদ, এমপি, মন্ত্রী ছাড়াও সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থা ও তার কর্তাব্যক্তিদের মন্তব্য করতে হয়। এটা তাদের আইনি ও পেশাগত এখতিয়ারের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে দেখা যায় তারা হরহামেশা বিপত্তি তৈরি করেন। সম্প্রতি বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এক প্রার্থীর ওপর হামলা ও জামালপুরে এক সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীন মন্তব্য সামনে এসেছে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি, ট্রল দেখা যাচ্ছে। উভয় ক্ষেত্রে তাদের মন্তব্য শুধু অতিকথন নয়, বরং তা ফৌজদারি অপরাধকে খাটো করে দেখার ও দেখানোর মতো অবিবেচনাপ্রসূত। অপরাধ ও অপরাধীদের প্রতি, তা সে ছোটখাটো হোক বা বড়, খাটো বা ছোট করে উপস্থাপনের স্নেহ কেন?
প্রথম ঘটনাটির কথায় আসা যাক। চলতি মাসের ১২ তারিখে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাতপাখার প্রার্থীর রক্তাক্ত হওয়াটা ‘আপেক্ষিক’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। শুধু তাই-ই নয়, সংবাদ সম্মেলনে তাকে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘উনি (প্রার্থী) কি ইন্তেকাল করেছেন?’ এখানেই শেষ না, আমতা আমতা করে তিনি বলেন, আমরা যেটা দেখেছি, ওনার কিন্তু রক্তক্ষরণটা দেখিনি। যতটা শুনেছি, ওনাকে কেউ পেছন দিক থেকে ঘুসি মেরেছে।’ ওনার মন্তব্যে হামলাকারীদের প্রতি, অপরাধীদের প্রতি এক রকম স্নেহ দেখতে পাচ্ছি। দায়িত্বশীল পদে থেকেও এখানে এ ধরনের মন্তব্য করেও পদে বহাল থাকা যায়। এখানে তিনি কী বলতে পারতেন তা আলোচনা করে লাভ নেই। কারণ, সত্যি বলতে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বশীলদের সুবিবেচনাপ্রসূত মন্তব্য শোনার উদাহরণ আমাদের দেশে খুবই কম। নেই বললেই চলে। মনেই পড়ে না বড় কোনো ঘটনায় অতিকথন, বিকৃত মন্তব্য, উদোর পি-ি বুদোর ঘাড়ে চাপানো টাইপ মন্তব্য ছাড়া কোনো বক্তব্য দায়িত্বশীলরা দিয়েছেন কি না, যা সত্যি বলতে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের চেয়ে, অপরাধের বিচারের চেয়ে সংস্থাটিকে বিতর্কিত ও ঘটনা থেকে মনোযোগ অন্যদিকে সারিয়ে নিয়ে যায়।