রাষ্ট্রপতি মূলত একটি আলংকারিক পদ। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদের এই মানুষটি সম্পর্কে আবদুল হামিদ ও ভারতের একমাত্র বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কথা এক। দুজনই বলেছেন, এ যেন পাঁচ তারকা কারাগারে বন্দী আয়েশি জীবন! এর ভেতরেই থাকতে হয় তাঁদের। এ কথা যেকোনো সরকারপ্রধানের বেলায়ও সত্য। উপমহাদেশে বা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এটাই নিয়ম।
অথচ উন্নত দেশ নামে পরিচিত দেশ ও সমাজে এসবের বালাই দেখি না। ব্যক্তিগতভাবে আমি দেখেছি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী রাস্তা পার হচ্ছেন হেঁটে। সিডনির ব্যস্ততম রাস্তায় ট্রাফিক লাইটের লাল আলোয় অসহায় উদ্বিগ্ন অপেক্ষারত প্রিমিয়ারের সঙ্গে কথাও বলেছি আমি। সহজ জীবনের কারণে একটা-দুটো সিকিউরিটি গার্ড ব্যতীত আশপাশে কোনো নেতা বা উপনেতার ভিড় থাকে না। কেউ কাউকে তোয়াজ না করা সমাজে এটাই রীতি। আমাদের দেশের চিত্রটি তার উল্টো। নেতা মানেই সঙ্গে লোকজন। চ্যালাদের ভিড়।
বলছিলাম রাষ্ট্রপতির কথা। এ পদটি দেশের সর্বোচ্চ পদ। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা নাজায়েজ। কারণ তিনি রাষ্ট্রের প্রতীক। এটি মূলত সম্মান আর মর্যাদার কারণেই করা হয়। তারপরও গণতান্ত্রিক দেশে কিছু না কিছু বলার লোকজন বা মিডিয়া থাকে। গোড়াতেই বলি, গণতন্ত্র যেসব দেশে প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থা, সেখানে কথা বলা অবারিত। তাই আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাগল বলা যায়। বাইডেনকে অথর্ব বললেও জান নিয়ে টানাটানি পড়ে না। অথচ কোনো কোনো দেশে এসব করা তো দূরের কথা, ভাবাও অপরাধ।
প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কী চান বা কাদের আদর্শ মনে করছেন।
ধরেন, যদি আমরা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তুলনা করি তাহলে নিশ্চিতভাবে বেহেশতে আছে মানুষ! কারণ সে দেশে মানুষের কথা বলা তো বটেই, ভাবারও কোনো অধিকার নেই। সে দেশের একজন নাগরিকের বাড়িতে ভয়াবহ আগুন লেগেছিল। ভদ্রমহিলা আগুন থেকে বাঁচতে তাঁর ছেলেমেয়েকে নিয়ে কোনোভাবে পালিয়ে বাঁচলেও শেষরক্ষা হয়নি। কেন তিনি পালানোর সময় বাড়িতে বাধ্যতামূলক রাখা কিম ও তাঁর পিতার ছবি বাঁচাননি, সে কারণে তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। সে দেশে সব মানুষের বাড়িতে একটা করে রেডিও দেওয়া আছে। সেই রেডিও সব সময় চলবে; অর্থাৎ সরকারের সময়মতো চলে। এটি বন্ধ করার কোনো নিয়ম নেই। আর যে সময় পর্যন্ত এটা চালু থাকে, পুরোটাই সরকারের প্রচার আর নিয়ম বলা হয়। সে তুলনায় আমাদের দেশ বা সমাজ আসলেই ঝুঁকিহীন।