বাংলা ভাষায় প্রথম আত্মজীবনী লেখেন একজন নারী, নাম রাসসুন্দরী দেবী। ঊনবিংশ শতকের এই নারী শিক্ষার সুযোগ পাননি। তা সত্ত্বেও প্রতিকূল পরিবেশে কারও সাহায্য ছাড়া নিজেই পড়তে শেখেন, লিখতে শেখেন। মহীয়সী এই নারীকে নিয়ে লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
আত্মজৈবনিক উপন্যাস
‘সেসব দিনের কথা আজও মনে পড়ে। খাঁচায় বন্দি পাখি, জালে আটকে পড়া মাছের মতো ছিলাম তখন।’ কথাগুলো রাসসুন্দরী দেবীর। আত্মজৈবনিক উপন্যাসে এভাবেই নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত তার ‘আমার জীবন’ বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম সম্পূর্ণ আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। অবিভক্ত বাংলায় উচ্চবর্ণের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া এই নারী তার জীবন সম্পর্কে উপন্যাসটিতে যা কিছু লেখেন, সেসব পড়ে তৎকালীন বাঙালি নারীর জীবন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ‘আমার জীবন’-এ বারবার নিজেকে খাঁচার পাখি হিসেবে অভিহিত করেন রাসসুন্দরী। তার সাহিত্যকর্ম বিভিন্ন দিক থেকে বিদ্রোহের প্রতীক। রাসসুন্দরীর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না।
শুধু তাই নয়, তার পড়াশোনা করা ছিল একেবারে নিষেধ। এই নিষেধাজ্ঞা এমনই চরম পর্যায়ে ছিল যে, এক টুকরো কাগজের দিকে তাকাতে পর্যন্ত তিনি সাহস পেতেন না এই ভয়ে যদি তার বিরুদ্ধে পড়তে জানার অভিযোগ ওঠে। যা-ই হোক, ২৫ বছর বয়সে হঠাৎ একদিন একটি বই তার হাতে আসে। বৈষ্ণব কবি বৃন্দাবন দাস ঠাকুর রচিত ‘চৈতন্য ভগবত’ ছিল সেই বই। বইটি তার স্বামী তাদের আট বছরের ছেলেকে পড়াতে গিয়ে ভুলে রান্নাঘরে ফেলে এসেছিলেন। দেখামাত্র বইটি লুকিয়ে ফেলেন রাসসুন্দরী এবং গোপনে নিজে নিজে পাঠ করার চেষ্টা করেন। এভাবে ধীরে ধীরে পড়তে শেখেন তিনি। কয়েক বছর পর মধ্যযুগের শেষ সময়ের বিভিন্ন ভক্তিমূলক বই পড়া শুরু করেন রাসসুন্দরী। তার আত্মজৈবনিক উপন্যাসটিতে এসব বইয়ের প্রতিফলন পাওয়া যায়।