অতিথি আপ্যায়ন ও দৈনন্দিন ব্যবহারে নানা রকম নকশার বাসনকোসন ব্যবহার করা হয়। কোনোটার প্রান্তজুড়ে থাকে সোনালি কিংবা রুপালি রেখা। কোনোটায় থাকে খাঁজকাটা নকশা। তুর্কির ঐতিহ্যবাহী বাহারি নকশাও আজ এ দেশের মানুষের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। কারুকার্যময় সব তৈজসের জন্যই চাই বিশেষ যত্নআত্তি। ঢাকার আজিমপুরে অবস্থিত গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে সালমা শিকদার দিলেন নানা পরামর্শ।
ঘষামাজার সরঞ্জাম
সিরামিক ও কাচের তৈজসে শক্ত স্ক্রাবার ব্যবহার করলে দাগ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, নষ্ট হয়ে যায় স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা। পিতল, কাঁসা, স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসের ক্ষেত্রেও শক্ত স্ক্রাবার ব্যবহারে দাগ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এগুলোর জন্যও বেছে নিতে হবে নরম স্ক্রাবার। ধাতব চামচ কিংবা ছুরি-কাটারের মতো সামগ্রীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
তৈজস পরিষ্কার করতে বেছে নিন ফোম জাতীয় নরম স্ক্রাবার। স্ক্রাবার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। ব্যবহারের পর স্ক্রাবারটি পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে শুকনা স্থানে রাখুন। বিশেষ তৈজস যা হয়তো কেবল বিশেষ উপলক্ষেই নামানো হয়, রোজকার ব্যবহার্য স্ক্রাবার দিয়ে সেগুলো পরিষ্কার না করে আলাদা একটা স্ক্রাবার দিয়ে পরিষ্কার করুন। নিত্যব্যবহার্য গ্লাস, মগ, বোতল, জগ, অর্থাৎ যাতে পানি ও পানীয় দেওয়া হয়, সেগুলোর জন্যও আলাদা স্ক্রাবার রাখুন। তারের তৈরি স্ক্রাবার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
বিশেষ কারুকাজ
তৈজসে খাঁজকাটা নকশা থাকলে কিংবা বিশেষ কোনো কারুকাজের অনুষঙ্গ বসানো থাকলে পরিষ্কার করতে পুরোনো নরম ব্রাশ ব্যবহার করুন। ব্রাশে পরিষ্কারক নিয়ে খাঁজের অংশগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিলে ময়লা জমে থাকতে পারে না।
তৈজসের সোনালি, রুপালি বা মেরুন রঙের প্রান্ত, যেখানে কোনো খাঁজ নেই বা বিশেষ অনুষঙ্গ বসানো নেই, তা নিয়ে আলাদা করে কিছু করার প্রয়োজন নেই। নরম স্ক্রাবার ব্যবহার করলেই হবে।
কেন মুছে রাখা জরুরি
তৈজস ধোয়ার পর পরিষ্কার নরম সুতি কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। কাচ বা সিরামিকের তৈজস মুছে না রাখলে পানির দাগ বসে যেতে পারে। ধাতব উপকরণের তৈজস মুছে বাতাসে শুকিয়ে নেওয়া আবশ্যক। নইলে মরিচা পড়ে যেতে পারে।
যেমন পরিষ্কারক চাই
তৈজসের জন্য যে নির্দিষ্ট তরল সাবান কিনতে পাওয়া যায়, এগুলো সব ধরনের তৈজসে ব্যবহার করাই নিরাপদ। এতে বাসন পরিষ্কার হয় সহজে। তরল সাবান ব্যবহার করা যায় স্বাচ্ছন্দ্যে। পানিতে মিশিয়ে নিলেই হলো।
চাইলে কেউ নির্দিষ্ট কোনো সাবানের বারও বেছে নিতে পারেন। এতেও বাসনের ক্ষতি হয় না। তবে বারের ওপর স্ক্রাবার ঘষে নেওয়ার সময় খুব বেশি শক্তি প্রয়োগ করবেন না। খেয়াল রাখতে হবে যাতে বারের গোটা অংশ দলা হয়ে স্ক্রাবারে লেগে না যায়। বরং এর মিহি স্তর স্ক্রাবারে উঠিয়ে আনতে হবে। ছাই ব্যবহার স্বাস্থ্যকর নয়। এতে হাতের ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। তৈজসে দাগও পড়ে যেতে পারে। কাঁসা বা পিতলের সামগ্রী পরিষ্কার করতে তেঁতুলমিশ্রিত পানি ব্যবহার করা উচিত নয়।
তেল-চর্বি এবং পোড়া দাগ তুলতে
তৈজস তেল চিটচিটে হয়ে গেলে, চর্বি সেঁটে থাকলে কিংবা পোড়া দাগ থাকলে সেগুলো পরিষ্কার করার আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখা উচিত। খুব বেশি ময়লা বা দাগ থাকলে কুসুম গরম পানিতেও ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে। তাহলে পরিষ্কার করার সময় খুব জোরে ঘষামাজা করার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে বাসনে স্ক্রাবারের দাগ পড়ার আশঙ্কাও থাকে না। প্রয়োজনে এসব তৈজস ধোয়ার সময়ও কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। যেকোনো উপকরণের তৈজসের ক্ষেত্রেই এ নিয়ম প্রযোজ্য। তবে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি বড় হাঁড়ি বা কড়াইয়ে খুব বেশি পোড়া দাগ বসে গেলে তারের তৈরি শক্ত স্ক্রাবার ব্যবহার করা ছাড়া উপায় থাকে না। তাই রান্নার সময়ই সতর্ক থাকা প্রয়োজন।