আকস্মিক দুর্ঘটনায় বা মুহূর্তের অসতর্কতায় পুড়ে যেতে পারে শরীর। রান্নাঘর, মোমবাতি, হারিকেন, মশা মারার কয়েল, গরম পানি, গরম পানীয় এমনকি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মতো সাধারণ দৈনন্দিন বস্তু ব্যবহারের অসতর্কতা থেকেও হতে পারে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহারে অসতর্কতাও পুড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
যদি দুর্ঘটনা ঘটে যায়, জরুরিভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এতে ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। শরীরের কোথাও আগুনে পুড়ে গেলে প্রাথমিকভাবে যেসব কাজগুলো করতে হবে—
তাপের উৎস থেকে সরে যেতে হবে:
যেখান থেকে তাপ লেগেছে সেই উৎসের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে হবে। কারণ সেখানে অবস্থান করলে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। আপনার আশেপাশে কেউ থাকলে দ্রুত সাহায্যের জন্য ডাকুন। এ সময় যত দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন তত বেশি সহজে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
আগুন নেভানো:
গায়ে আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে তা নিভিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে, ভারী কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে, পানি দিয়ে কিংবা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের সাহায্যে আগুন নিভিয়ে ফেলতে হবে। যদি গায়ের কাপড়ে আগুন ধরে যায় তবে সঙ্গে সঙ্গে তা খুলে ফেলতে হবে।
পানি ঢালতে হবে:
পুড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত স্থানে প্রচুর পানি ঢালতে হবে। প্রবাহমান পানির নিচে অর্থাৎ ট্যাপের পানির নিচে আক্রান্ত স্থান অন্তত বিশ মিনিটের মতো ধরে রাখতে হবে। সেটি সম্ভব না হলে বালতিতে পানি নিয়ে মগের সাহায্যে বিশ মিনিটের মতো পানি ঢালতে হবে। এতে আক্রান্ত স্থান ঠান্ডা করা সহজ হবে। সাধারণ তাপমাত্রার বা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে বরফ ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা যাবে না।
গায়ের কাপড় ও গয়না খুলে ফেলুন:
শরীর পুড়ে গেলে আক্রান্ত স্থানের কাপড় খুলে ফেলতে হবে। সেইসঙ্গে শরীরে কোনো গয়না থাকলে তাও খুলে ফেলতে হবে। যদি পুড়ে চামড়ার সঙ্গে কিছু লেগে যায় তবে তা টানাটানি করে খোলার চেষ্টা করবেন না। এতে ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।
আক্রান্ত স্থান ঢাকতে হবে:
পোড়ার কারণে সৃষ্ট ক্ষতস্থানটি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত গজ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। যদি হাতের কাছে গজ না থাকে তবে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত কাপড় অথবা পলিথিন ব্যবহার করতে হবে। কারণ খোলা রাখলে সেখানে আরও বেশি সংক্রমণের ভয় থাকবে।
কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দিন:
আক্রান্ত ব্যক্তিকে পরিষ্কার চাদর বা কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে। এতে শরীরের অনুকূল তাপমাত্রা বজায় থাকবে। আক্রান্ত স্থানে যেন কোনো ধরনের চাপ বা ঘষা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
রোগীকে বসিয়ে রাখতে হবে:
চোখ কিংবা মুখ পুড়ে গেলে সেক্ষেত্রে রোগীকে বসা অবস্থায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। এতে ফোলা কিছুটা কমতে পারে। যদি পা কিংবা শরীরের নিচের দিকের কোনো অংশ পুড়ে যায় তবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুইয়ে পায়ের দিকটা উঁচু করে রাখতে হবে।
এছাড়া পোড়ার পরিমাণ বেশি হলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে। আক্রান্ত স্থানে টুথপেস্ট, তেল ও হলুদ ব্যবহার করা যাবে না। ক্ষতস্থানে সরাসরি তুলা, টিস্যু কিংবা ক্রিম লাগানো যাবে না। ফোসকা পড়লে তা হাসপাতালে যাওয়ার আগে ফাটানো যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শের বাইরে কোনো ধরনের ড্রেসিং, মলম বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না।