ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সমালোচনার মধ্যেও এই আইনে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে দ্বিগুণ মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। শুক্রবার সংস্থার সভাপতি সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত মার্চ মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। সংস্থাটি জানিয়েছে, মার্চে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১০ মামলায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১ জন সাংবাদিক, ১ জন বিএনপি কর্মী, ১ জন আওয়ামী লীগ কর্মী, ১ জন অভিনেত্রী, ২ জন যুবক এবং ১ জন সরকারি কর্মচারী রয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারি মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার সংখ্যা ছিল ৫ টি। এ মাসে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই আইনে ৩টি মামলা হয়েছে যার মধ্যে ১ জন সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারী নারী র্যাবের হেফাজতে মারা যান। এসব মামলার ৭টি হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এ ধরনের সমালোচনামূলক পোস্ট বা শেয়ার অথবা কমেন্ট করার কারণে। এ ছাড়াও প্রতারণার অভিযোগে ২টি এবং জনমনে ভীতি প্রদর্শন, জনমনে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কথিত অপরাধে ১টি মামলা হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে এমএসএফ বলছে, এ আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহারের মাধ্যমে মানুষকে মতামত প্রকাশে বাধাগ্রস্ত করা ও ভয় দেখানো এবং সকলের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার একটি ভয়ংকর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, চলতি মাসে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অন্তত ৪০ জন সাংবাদিক নানাভাবে অপমান, নিপীড়ন, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান ছাড়াও আরও ৩ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
এ ছাড়াও প্রতিবেদনে মার্চে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসমূহের মানবাধিকার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মার্চে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে একজন নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুলিশের গাড়িতে করে নরসিংদী কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পথে সিরাজ মিয়া ও ২২ মার্চ সকালে নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হয়। এ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তিনজনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমএসএফ আরও জানায়, বিরোধী দলীয় কর্মসূচিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বল প্রয়োগ, বাধাদান অব্যাহত ছিল। এ মাসে রাজনৈতিক, নির্বাচনী সহিংসতা ও সভা সমাবেশে বাধার ৩১টি ঘটনায় ৩৮৫ জন আহত ও ৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ৫ জনের মধ্যে ৩ জন ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে ও ২ জন ইউপি নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেছেন।
এ মাসে ৫টি রাজনৈতিক মামলার মধ্যে বিএনপির বিরুদ্ধে ২ টি,৩টি জামায়াত ইসলামি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১৭০ জন রাজনৈতিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এতে ১১২ জন বিএনপি ও ৫৮ জন জামায়াত ইসলামির কর্মী রয়েছেন। মার্চে কারা হেফাজতে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল ৫ জন। এ মাসে ৩ জন হাজতি ও ৩ জন কয়েদির মৃত্যু হয়েছে।