ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: ভাগ-বাঁটোয়ারাই অস্থিরতার মূলে

আজকের পত্রিকা প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২৩, ১২:১৪

শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষ, নিয়োগ ও দরপত্র নিয়ে বাণিজ্যের অডিও ফাঁসসহ নানা ঘটনায় এক মাস ধরে আলোচনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অস্থিরতা সৃষ্টির নেপথ্যে আছে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজ ও নিয়োগ-বাণিজ্যের ‘ভাগ-বাঁটোয়ারা’র হিসাব-নিকাশ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষক রাজনীতির নানা সমীকরণ। গত দুই দিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানকালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।


স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর যাত্রা শুরু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের। কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলায় ১৭৫ একর জায়গাজুড়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা সাড়ে ১৭ হাজার আর শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় ১ হাজার।


বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত চলমান মেগা প্রকল্পের কাজ ও নিয়োগ-বাণিজ্যের ‘ভাগ-বাঁটোয়ারা’ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদার, শিক্ষকদের একাংশ এবং ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের একাধিক পক্ষ।


এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত এক মাসের বেশ কিছু ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। এসব সমস্যা সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ প্রয়োজন। 


মেগা প্রকল্পের ভাগ-বাঁটোয়ারা
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২০১৮ সালের ২৫ জুন ৫৩৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক 
পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এটি মেগা প্রকল্প নামে পরিচিত। 


প্রকল্পের অধীনে আছে ৯টি ১০তলা ভবন নির্মাণ, ১৯টি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণসহ বেশ কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজ।জানা যায়, সাবেক উপাচার্য মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী উন্নয়ন প্রকল্পের অধিকাংশ কাজের দরপত্রপ্রক্রিয়া সারেন। সব প্রক্রিয়া শেষে ১০টি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকাজ শুরু হয় তাঁর মেয়াদকালেই। সে সময়েই দরপত্রপ্রক্রিয়া নিয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও তথ্য ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। পরে অনিয়মের অভিযোগে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি পুনর্গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন দায়িত্ব নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম অধিকাংশ দরপত্র বাতিল করে নতুন করে ই-টেন্ডার ডাকেন। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।


বেপয়োরা ছাত্রলীগ
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দরপত্র ও নিয়োগ-বাণিজ্যে সুবিধা করতে না পেরে প্রশাসনকে চাপে রাখতে বিভিন্ন ঘটনা ঘটাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশ। একই সঙ্গে শিক্ষকদের দলাদলিতেও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তারা।


সূত্রমতে, আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নিয়োগ দিত। কিন্তু এতে রাজি নন বর্তমান উপাচার্য। এ ছাড়া মেগা প্রকল্পের দরপত্র পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও সুবিধা করতে পারেনি ছাত্রলীগ। বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে ছাত্রলীগের। সম্প্রতি কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য টাইপিং দক্ষতার পরীক্ষা বন্ধ করে দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কয়েকটি পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে। পরীক্ষাগুলো এখনো হয়নি।


শিক্ষকদের দল-উপদল
জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতি প্রধান ভাগ দুটি। একভাগে আওয়ামীপন্থী ও প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম; অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতপন্থী জিয়া পরিষদ, সাদা ও সবুজ দল।


বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকেরাও দ্বিধাবিভক্ত। এক পক্ষে আছেন বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান। অন্য পক্ষে সাবেক উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ। এর বাইরে কয়েকজন শিক্ষক বর্তমান উপাচার্যকে ঘিরে একটি বলয় গড়েছেন। 


অডিও নিয়ে অস্বস্তি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে উপাচার্য ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের একাধিক অডিও ক্লিপ। এসব অডিওতে নিয়োগ-বাণিজ্য ও ঠিকাদারদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায়। যদিও এসব কথোপকথনকে ‘কণ্ঠসদৃশ’ বলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।


জানা যায়, অডিও ছড়ানোর পরই উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মীরা। তারা ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ড মাইকে বাজিয়ে শোনান। পরে গোপন ডিভাইসের খোঁজে উপাচার্যের কার্যালয় ও বাসভবনে তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্থগিত করা হয় পাঁচটি নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড।


সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় চলছে। কোনো অনিয়ম ও অনৈতিক আবদার রক্ষা আমার পক্ষে সম্ভব না। মেধার বাইরে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। আর চলমান উন্নয়নকাজ যেন মানসম্পন্ন হয়, সে জন্য নিয়মিত তদারক করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।’ অডিও ক্লিপ সম্পর্কে তিনি বলেন, অডিও ক্লিপগুলো পরিকল্পিতভাবে বানানো হয়েছে, যা সত্য নয়। এগুলো গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us