গ্লুকোমা বিশ্বব্যাপী স্থায়ী অন্ধত্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ। বিশ্বের প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ গ্লুকোমার কারণে স্থায়ী অন্ধত্বের শিকার আর ৮ কোটি মানুষ গ্লুকোমায় আক্রান্ত। তাঁদের বেশির ভাগই এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশের মানুষ। ৯০ ভাগ মানুষই এ রোগ সম্পর্কে জানেন না।
গ্লুকোমা কী
গ্লুকোমা চোখের প্রধান স্নায়ুরজ্জুর (অপটিক নার্ভ) একটি রোগ, যেখানে স্নায়ুরজ্জু ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে। ফলে দৃষ্টির পরিসীমা ক্রমাগত সংকুচিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে স্থায়ী অন্ধত্বের শিকার হন।
কারা ঝুঁকিতে
গ্লুকোমা বয়সজনিত রোগ। তাই ৪০ বছরের পর যে কেউ এতে আক্রান্ত হতে পারেন। অন্য যেসব ঝুঁকির কারণে রোগটি হওয়ার আশঙ্কা আছে, তা হলো বংশগত ইতিহাস (মা-বাবা, ভাই-বোন এ রোগে আক্রান্ত হলে তাঁদের ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ), ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাইনাস বা প্লাস পাওয়ার, মাইগ্রেন, চোখের আঘাত, চোখের অন্যান্য রোগ ও চিকিৎসকের উপদেশ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিতভাবে স্টেরয়েড জাতীয় চোখের ড্রপ ব্যবহার।
এ রোগের সঠিক কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জানা যায়নি, তবে চোখের অন্তর্গত উচ্চচাপ প্রধানতম ঝুঁকি।
কীভাবে নির্ণয়
গ্লুকোমাকে বলা হয় চোখের নীরব ঘাতক। বেশির ভাগ গ্লুকোমাই উপসর্গবিহীন। চোখের চাপ, স্নায়ুরজ্জুর অবস্থা ও দৃষ্টির পরিসীমা পরীক্ষা করে খুব সহজে গ্লুকোমা নির্ণয় করা যায়। কখনো কখনো জন্মগতভাবেও এ রোগ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জন্মের পর শিশুর চোখ থেকে পানি পড়া, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, অস্বচ্ছ মণি ও অক্ষিগোলক বড় হতে থাকা—এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে শিশুর চোখ পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।
তাই নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করা গ্লুকোমা প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
চিকিৎসা
তিন উপায়ে সাধারণত গ্লকোমা চিকিৎসা করা হয়—চোখের বিভিন্ন ড্রপ, লেজার ও গ্লকোমা সার্জারি।
গ্লুকোমা রোগের সব ধরনের প্রচলিত চিকিৎসা দেশেই সম্ভব ও সুলভ।
বিশ্বব্যাপী গ্লকোমার অন্ধত্বকে প্রতিরোধ করতে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ ব্রাইট, সেইভ ইওর সাইট’—এই স্লোগান নিয়ে ‘বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস’ পালিত হয়। অন্ধত্বকে রোধ করতে সবাইকে সচেতন করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য।