‘তিন মাস ধরে ব্রয়লার মুরগি খেতে পারছি না। দাম বেশি, কিনতে গিয়ে কেনাও হয় না। আর গরুর মাংস তো একেবারেই খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। যেভাবে ব্রয়লারের দাম বাড়া শুরু হয়েছে, এবার রমজানে মনে হয় মুরগি পেটে যাবে না। আমরা গরিব মানুষ তো ব্রয়লারের দামের কাছে হেরে যাচ্ছি।’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাজিয়া বেগম। পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী এই নারী থাকেন রংপুরের পীরগাছা উপজেলার হাউদারপাড় গ্রামে। তার স্বামী দিনমজুর।
উপার্জনক্ষম ছেলের মৃত্যুর পর রাজিয়ার সংসারে নেমে এসেছে নিদারুণ কষ্ট। এখন কোনো রকমে দিন যায় দিন আসে। কিন্তু রাজিয়ার সংসারে দুবেলা-দুমুঠো খাবারের নিশ্চয়তা আসেনি। বৃদ্ধ স্বামী একদিন কাজে না গেলে চুলায় হাড়ি উঠাতেও ভাবতে হয় তাকে।
গত সোমবার (৬ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে রাজিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে চুলায় চালের হাড়ি বসিয়েছেন তিনি। ভাত রান্নার পর বসবে তরকারির হাড়ি। তবে কী তরকারি রান্না হবে সেটা তখনো অজানা, কারণ তার স্বামী বাজারের ব্যাগ নিয়ে তখনো বাড়িতে আসেননি।
ব্রয়লার মুরগি কেনা হয় কিনা- জানতে চাইলে এই গৃহিণী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চারদিন ধরে আমার স্বামীর কাজ নেই। আজকে সকালে বের হয়েছে। কাজ জুটলে পাতে ভাত-তরকারি জুটবে। এখন আমরা মুরগি খেতে পারি না, মাঝে মধ্যে মুরগির ছাড়ানো চামড়া এনে রান্না করি। সব সময় ব্রয়লার মুরগি খাওয়া সম্ভবও নয়। আমাদের আবাদ-সুবাদ নেই, গরিব মানুষ। মাসে মাসে কিস্তি দিতে হয়।
রাজিয়ার মতো দরিদ্র পরিবারের ভাতের থালায় ‘ব্রয়লার’ এখন লাপাত্তা। এ অবস্থা শুধু রাজিয়াদেরই নয়, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারেও একই চিত্র। এক বছরের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে এখন তা ২৪০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কোথাও আবার ২৫০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে। যা বেশির ভাগ পরিবারের কাছেই সহনীয় নয়।
এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ার পেছনে খামারি ও ব্যবসায়ীরা বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেটকে দুষছেন। সঙ্গে রয়েছে পোল্ট্রি ফিড, মুরগির বাচ্চা, মেডিসিন, পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শীত মৌসুমে উৎপাদন কম হওয়ারও কারণ। বর্তমানে বাজারে ব্রয়লার মুরগির আমদানিও কম বলে দাবি করছেন তারা। রমজানের ঠিক আগে যদি এমন দাম হয়, তাহলে রমজান মাসে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন সাধারণ ক্রেতারা।
আমিষে আঘাত, গরিবের পাত থেকে উঠে যাচ্ছে ব্রয়লার
ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার পর দিনমজুর শ্রেণির মানুষগুলোর আমিষের ওপর আঘাত এসেছে। এসব মানুষ আগে সপ্তাহে দুইবার মুরগি খেলেও এখন একদিন খেতেই হিমশিম খাচ্ছে। হু-হু করে দাম বাড়তে থাকায় নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের পাত থেকে ব্রয়লার যেন উঠেই যাচ্ছে। এখন মুরগির মাংসের বদলে মুরগির চামড়া-পাসহ অবশিষ্ট অংশেই ঝুঁকছেন বেশির ভাগ দিনমজুর পরিবার।
পীরগাছা উপজেলার হাউদারপাড় গ্রামে কথা হয় মোজাফফর হোসেনের সঙ্গে। গ্রামের আট-দশটা সহজ সরল মানুষের মতো অনেকটাই সাদাসিদে জীবনযাপন করছেন এই দিনমজুর। বেশির ভাগ সময়ই তার পরিবারের সদস্যদের দিন কাটে সাদামাটা খাবারে। কোনটি আমিষ আর কোনটি শর্করা জাতীয় খাবার বা কোন খাবারে কী ধরনের প্রোটিন-ভিটামিন আছে, তাও জানা নেই মোজাফফরের।