বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৫০ জনের বেশি প্রাণহানির ঘটনার ৯ মাসের মাথায় আবারও বিস্ফোরণে কাঁপল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। গত ৪ মার্চ সীমা অক্সিজেন লিমিটেড কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে সাতজন নিহত হয়েছেন; আহত ২৪ জন।
সীমা অক্সিজেন প্লান্ট থেকে বিএম কনটেইনার ডিপোর দূরত্ব আধা কিলোমিটারের মতো। ধারণা করা হচ্ছে, মালিকপক্ষের যে ধরনের অনিয়ম এবং তদারকি সংস্থাগুলোর যে ধরনের গাফিলতির কারণে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল; সীমা অক্সিজেন প্লান্টেও একই কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিএম কনটেইনার ডিপোর ঘটনায় দায়ী মালিকপক্ষ ও তদারকি সংস্থার কর্মকর্তাদের শাস্তি হলে এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সব বিপজ্জনক কারখানায় সংস্কারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে এ ধরনের বিস্ফোরণ হয়তো এড়ানো যেত।
গত বছর ৪ জুন বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর গঠিত বিভাগীয় কমিশনারের তদন্ত কমিটি ৬ জুলাই দুর্ঘটনার কারণ, দায় ও ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা এড়ানোর সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ও বিস্ফোরণের জন্য ডিপোর মালিকপক্ষ এবং বন্দর, কাস্টমস, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ ২৫ তদারকি সংস্থার অবহেলাকে সরাসরি দায়ী করা হয়। এই ঘটনায় মামলায় কারখানার আট কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। কিন্তু মালিকপক্ষ ও তদারকি সংস্থার কাউকে আসামি করা হয়নি।
এ ছাড়া, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে বিস্ফোরণজনিত নিরাপত্তা, অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ২০ দফা সুপারিশ করা হয়। আট মাস পার হলেও সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু তাই নয়; সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পরিদর্শনে সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন লিমিটেড কারখানায় নানা ধরনের ঘাটতি ধরা পড়েছিল প্রায় ১৪ মাস আগে। ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর সীমা অক্সিজেন কারখানা পরিদর্শন করে বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ডের (বিডা) নেতৃত্বে সরকারের ৯টি সংস্থার প্রতিনিধি দল। সেই পরিদর্শনে বিদ্যুৎ, অগ্নি, অবকাঠামো, পরিবেশ ও বিস্ফোরণ-সংক্রান্ত পাঁচ ক্যাটাগরিতে কারখানাটির বিভিন্ন নিরাপত্তা ত্রুটি ধরা পড়ে।
ত্রুটিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য– বিস্ফোরণজনিত নিরাপত্তায় ঘাটতি, কারখানায় অক্সিজেন সংরক্ষণ; পরিবহন ও স্থানান্তর এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতি সম্পর্কে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিক ধারণা ও প্রশিক্ষণ না থাকা; ফায়ার হাইড্রেন্ট, ধোঁয়া শনাক্তকরণ যন্ত্র, অগ্নিপ্রতিরোধী ফলস সিলিং বা ছাদ, ফায়ার সেফটি প্ল্যান না থাকা; শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ ও ব্যবহারের বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে পালন না করা ইত্যাদি। ২০২২ সালের ৩০ মার্চ এই পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও এসব চিহ্নিত ত্রুটি দূর করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। (সরকারি প্রতিবেদনেই কারখানার নিরাপত্তায় ঘাটতি ধরা পড়েছিল, প্রথম আলো, ৭ মার্চ ২০২৩) যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হলে হয়তো এ ধরনের বিস্ফোরণ ও প্রাণহানি এড়ানো যেত।