স্বীকার করতেই হবে একাত্তরের যুদ্ধে নেতৃত্ব ছিল পেটি বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদীদের হাতে। তাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে যুক্ত হয়েছিল বুর্জোয়াদের ছোট একটি অংশ। বুর্জোয়াদের বড় একটি অংশের নীরব সমর্থনও ছিল। কিন্তু অন্যসব বড়মাত্রার আন্দোলনে যেমন, এটিতেও তেমনি নেতৃত্ব সংরক্ষিত ছিল পেটি বুর্জোয়াদের কাছেই। বুর্জোয়াদের সঙ্গে পেটি বুর্জোয়াদের পার্থক্য অবশ্যই ছিল, বুর্জোয়ারা ছিল অধিক বিত্ত ও ক্ষমতার অধিকারী, তাদের জানাশোনা ওঠাবসা রাষ্ট্রীয় উচ্চমহলের সঙ্গে, যোগাযোগ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।
কিন্তু মিলের জায়গাটা এইখানে যে উভয় শ্রেণিই উন্নতির জন্য উন্মুখ। এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি। মুসলমান বুর্জোয়া এবং পেটি বুর্জোয়ারা উভয়ে ব্রিটিশ আমলে দেখতে পাচ্ছিল যে তাদের জন্য উন্নতির পথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে অগ্রসর হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা। পথ মুক্ত করার জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল। কিন্তু পাকিস্তান হওয়ার পর টের পাওয়া গেল যে উন্নতির পথটা যথেষ্ট প্রশস্ত হয়নি; হিন্দুরা চলে গেছে কিন্তু অবাঙালিরা এসে হাজির হয়েছে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এই নবাগতদের হটাবার জন্যও প্রয়োজন হয়েছিল। আত্মমর্যাদার ওপর আঘাত তো ছিলই, উন্নতিতে বিঘ্ন সৃষ্টিও ভয় পাইয়ে দিয়েছিল।