কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়নের খড়িলা বিলের কৃষক তারিকুল ইসলাম দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেছিলেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাঁকে এক কেজি বীজ সহায়তা দেওয়া হয়। বীজতলা থেকে জমিতে রোপণের পর সব পেঁয়াজের চারা মারা গেছে। পটুয়াখালীর বাউফলের মদনপুরা ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া গ্রামের কৃষক সেলিম হাওলাদার কৃষি অফিস থেকে এক কেজি সরিষা বীজ বপন করেছিলেন, কিন্তু অর্ধেকের বেশি বীজ থেকে চারা গজায়নি।
রবি মৌসুমে ফসল উৎপাদন বাড়াতে কৃষি মন্ত্রণালয় ৬৪ জেলার ১৬ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ কৃষককে বিনামূল্যে বীজ সুবিধা দেয়। বীজ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৮০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সরকারের এই প্রণোদনার বীজই এখন বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। (প্রণোদনার বীজে কৃষকের সর্বনাশ, সমকাল, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩)।
শুধু এ বছর বা একটি মৌসুম নয়; একটি এলাকা নয়; প্রণোদনার বীজে দেশের নানা অঞ্চলের কৃষক অনেক বছর ধরেই ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকবার সংবাদমাধ্যমে এসব খবর প্রকাশিতও হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি।
আমরা জানি, দুর্যোগ, মন্দা বা কোনো সংকট কাটিয়ে ওঠা কিংবা ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সরকার নানাভাবে কৃষি সহযোগিতা ও সম্প্রসারণ কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে বীজ প্রণোদনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সরকারি প্রণোদনার বীজে দেশের কৃষি খাত আরও নিম্নগামী হচ্ছে। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি প্রণোদনার বীজ চাষ করে কৃষকের সময়, শ্রম, জমি, অর্থ নষ্ট হচ্ছে। আর এসব বীজের মান পরীক্ষা বা জবাবদিহি নিশ্চিত হচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে রাষ্ট্র দাঁড়াচ্ছে না। এ ঘটনা দেশের সামগ্রিক কৃষি উৎপাদন ও খাদ্যব্যবস্থায় এক প্রকার চাপও তৈরি করছে। কারণ উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত না হওয়ায় খাদ্যের পূর্বাভাস ও ফলনের পরিমাণে গরমিল হচ্ছে।