ফেব্রুয়ারি শুধু উৎসবের মাস নয়। এটি প্রতিশ্রুতির মাস। আমাদের মূলধারার সংস্কৃতি, ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফেব্রুয়ারি ধারণ করে। কাজেই ফেব্রুয়ারি এলে একদিকে যেমন বাংলা একাডেমির আয়োজনে মাসব্যাপী বইমেলা শুরু হয়; আরেকদিকে জাতীয় কবিতা পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু হয়। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, এবারের জাতীয় কবিতা উৎসবের উদ্বোধক আমি। আট মাস কানাডায় ছিলাম। এবার ভাষার মাসে দেশে আছি। এর মধ্যে আলাদা আনন্দ আছে। বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে মাসব্যাপী অনুষ্ঠান হয়। এখানে বিকেলে আলোচনা ও সন্ধ্যার পর থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। শুধু বাংলা একাডেমি নয়; শিল্পকলা একাডেমিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এগুলো সংস্কৃতিচর্চায় ভূমিকা রাখে।
আমার কাছে মনে হচ্ছে, যদিও ফেব্রুয়ারি মাসে এ কথাটা উচ্চারণ করা কষ্টকর- বাংলা ভাষা অনেক বিপদে আছে। বিশেষ করে প্রমিত বাংলা খুবই বিপদে। এ ব্যাপারে একটি উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সরকার নেবে- এ কথা ভেবে বসে থাকলে হবে না। বাংলাদেশের কোনো কাজই সরকারের ভরসায় বসে থাকেনি। আমাদের সুশীল সমাজ, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত তাদের ভূমিকা দ্রুততার সঙ্গে পালন করেছে বিভিন্ন সময়। আজকে সে উদ্যোগটি একদম দেখি না।
সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যদি বলি, গ্রামাঞ্চলে যাত্রাপালা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। কবিগান তো হয়ই না। নাটক করতে গেলে মৌলবাদীদের অনুমতি নিতে হয়। এসব আমি শুনেছি; নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। গানবাজনা হলে হারমোনিয়াম কেড়ে নিয়ে যায়। এ রকম ঘটনা ঘটছে। এগুলো দিনের পর দিন সহ্য করলে যা হয়; আমার মনে হয়, অপসংস্কৃতি নিজেই তার জায়গাটি করে নেয়। ফেব্রুয়ারি মাসে এ বছর অন্তত আমরা যেন এটি প্রতিহত করার চেষ্টা করি। এ ক্ষেত্রে সরকারের ওপর আশা-ভরসা করে থাকলে চলবে না। রাজনৈতিক দলগুলো করবে- এটি মনে করারও কোনো কারণ নেই। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থ ছাড়া কোনো কিছুতে এক পা-ও এগোবে না। আবারও বলি- এক পা-ও এগোবে না। কাজেই এ ক্ষেত্রে নিজেদেরই উদ্যোগটি নিতে হবে।