পানি সাম্রাজ্যবাদ

দেশ রূপান্তর হরিপদ দত্ত প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:২৪

শিগগিরই পানি নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হোক চাই না হোক, আগামী দিনে তেল-গ্যাসের চেয়েও মুনাফার উপাদান হিসেবে পানি যে গুরুত্বপূর্ণ তা স্বীকার করেন বিশ্ব অর্থনীতিবিদরা। পানি যে শুধু পানের জন্যই নয়, জীব বা মানবসভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষার মূল উপকরণ, তা মিথ্যে নয়। মহাশূন্যে মৃত নক্ষত্রগুলোর বিষয়ে ভাবলেই বোঝা যায়সভ্যতার বিকাশ, নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্পায়ন ইত্যাদির কারণে বিশুদ্ধ পানীয়জলে টান পড়েছে। বিষয়টা সাধারণ মানুষ ততটা বুঝতে না পারলেও, পানি-বাণিজ্যের মুনাফাখোররা তা স্পষ্ট বোঝে। পৃথিবী তো বটেই, মহাশূন্যের গ্রহের পর গ্রহে ওরা বিজ্ঞান সাধনার নামে হন্যে হয়ে পানির অনুসন্ধান করছে। মহাশক্তিধর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প তো স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ গ্রিনল্যান্ডকে কিনে নেওয়ার কথাই বলে ফেলেছিলেন। এখানে রাজনৈতিক প্রশ্নে অপরাপর স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে বরফ-পানির বিষয়টিও জড়িয়ে আছে।


সুমেরু-কুমেরুর বিশাল ঠান্ডা-জমাট পানির অধিকার নিয়ে আমেরিকা আর ইউরোপ এরই মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। তাই লবণ-বিযুক্ত বিশুদ্ধ পানি আজ বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের বিপুল মুনাফার বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে মেরুদেশের কোটি বছর আগে জমাটবাঁধা বরফ গলতে শুরু করেছে। মাইলের পর মাইল দীর্ঘ হিমবাহ গড়িয়ে নামছে সমুদ্রে। ডুবন্ত এবং ভাসমান হিমবাহগুলো সমুদ্র স্রোতের টানে ভেসে আসছে। ব্রিটিশ এবং মার্কিন দেশের পানি ব্যবসায়ীরা সেসব টেনে আনছে আúন উপকূলের দিকে এবং সেসব তরল করে বোতলজাত করে বাজারে নামিয়ে কিংবা পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করে কামাই করছে বিপুল অর্থ। তেল-গ্যাসের মতো বিকল্প লড়াইয়ের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে এভাবে।


ভেঙে যাওয়ার পরও রাশিয়া বিশ্বে আয়তনের ক্ষেত্রে সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র। দ্বিতীয় স্থান কানাডার। মার্কিনের জনসংখ্যা ৩০ কোটি, অথচ কানাডার জনসংখ্যা কমবেশি মাত্র দুই কোটি। জমাটবাঁধা জল আধুনিক অর্থনীতির বিবেচনায় কানাডার রয়েছে বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ। এ সম্পদকে ওরা চেনে, মানে, জানে। স্বচক্ষে দেখলে বিস্মিত হতে হয় যে, কানাডা তার ভাঙনপ্রবণ মিঠাপানির উৎস নদী এবং হ্রদগুলোর তীর মূল্যবান ফসিল বা জীবাশ্ম-পাথর, যা তৈরি হয়েছে কোটি বছর আগে সামুদ্রিক প্রাণীর দেহাবশেষ দিয়ে, বড় বড় চাঁই ফেলে সেসবের ভাঙন রোধ করেছে। সেসব পাথরের চাঁইয়ে নকশা এঁকে আছে সামুদ্রিক প্রাণীর চিহ্ন। কানাডার বরফগলা জলের একটি অংশ বিশাল বিশাল পাইপের মাধ্যমে মার্কিন সীমান্ত অতিক্রম করছে। কোটি কোটি ডলার আয় হচ্ছে খোদার দান সেই বিশুদ্ধ পানি থেকে। কানাডিয়ানরা ভাগ্যবান এ কারণেই যে, তাদের ভূখন্ডের চার ভাগের তিন ভাগই বরফ সম্পদে ঢাকা। আগামী বিশ্বে পানি-বাণিজ্যে তারাই থাকবে এগিয়ে। বিষয়টা জানে বলেই বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ মেরুদেশ বা ভূমি দখলের জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার নামে, আবহাওয়া বিজ্ঞানচর্চার নামে বরফের দেশে লোলুপদৃষ্টি মেলে আছে। বরফসমৃদ্ধ দেশের সঙ্গে আগাম চুক্তিও করে রাখছে।


সৌদি আরবসহ গোটা আরব বিশ্বকে বিশুদ্ধ পানীয়জলের জন্য নির্ভর করতে হয় বহির্বিশ্বের ওপর। তেলের বিনিময়ে তাদের পানীয়জল আমদানি করতে হয়। সৌদি আরবে হজের সময় এর চাহিদা বৃদ্ধি পায় হাজার গুণ। ভারতসহ অপরাপর দেশ এই পানি-বাণিজ্যে যুক্ত। শুধু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেই নয় অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পাইপ লাইনের বদলে, তৈল ট্যাংকারের বদলে পানির ট্যাংকার ছুটে চলে রেলপথ ধরে। এমনটা ঘটে ভারতের খরাকবলিত বহু প্রদেশে। আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো বিনে পয়সায় নদী (নীল নদ) এবং ভূগর্ভ থেকে পানি তুলে অধিক মূল্যে তা জনগণের কাছে বিক্রি করে। এটা চরম ও পরম সত্য যে আগামী বিশ্বে মিঠাপানির আকাশ-পাতাল নদী-হ্রদ সব উৎসই দখলে নেবে পানি সাম্রাজ্যবাদ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us